একজন সুস্মিতার গল্প
সূত্র: সুস্মিতা (ছদ্ম নাম) - এর কেসটি এক ক্লায়েন্ট রেফার করেছিলেন।ইন্টেক ইনফর্মেশন “বাবা মরা বিবাহিত মেয়ে, শ্বশুড় বাড়ীর লোক এতিম বলে ভাল ব্যবহার করছে না এবং বর্তমানে স্বামীও পুরান প্রেমিকার সাথে আবার সম্পর্ক করছে….”।
সু্স্মিতা যে দিন প্রথম চ্যাম্বারে এলেন, দিনটি শনিবার ছিল, তাই ক্যাজুয়াল (জিন্স ও টপস্) পোশাকে ছিলেন। সেশন শেষ করে আবার অফিসে যাবেন।উনি একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির “কি একাউন্টস ম্যানেজার”। দু’বোন ও ছোট এক ভাই।বাবা ব্যবসায়ী ছিলেন, উনি যখন মারা যান,তখন ক্লায়েন্টি ক্লাস টেনে পড়ছিলেন। সংসার চলতো বাবার রেখে যাওয়া সেভিং ও নানুর বাড়ীর সাহায্যর উপর। কলেজে উঠার পর থেকেই টিউশনি শুরু করেন, অনার্স ক্লাস থেকে খন্ড কালিন চাকরী আর এখনতো ৩ বছর ধরে চাকরী করছেন। সব কিছু শুনে যা বুঝা গেল ও খুবই পরিশ্রমি, ব্রিলিয়ান্ট ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একজন মেয়ে।
বর্তমান সমস্যা: গত দু’মাসে দুই, দুই বার অফিসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথম বার হসপিটালে নিতে হয়নি, পরের বার কলিগরা তাকে হসপিটালে নিয়ে যান।যেসব উপসর্গ নিয়ে উনি হসপিটালে গিয়েছিলেন - দ্রুত হার্টবিট,হাত অবশ হয়ে যাচ্ছিল,শ্বাস/দম নিতে কষ্ট হচ্ছিল,ঘাম হচ্ছিল।শারীরিক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে কিছু না পাওয়ায় রিলিজ করে দেন।এর পরও এমন মাঝে মধ্যেই হচ্ছে তাই আজ মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিতে এসেছেন।
সব কিছু পর্যালোচনা করে যা বুঝা যাচ্ছে ওনার প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে। প্যানিক অ্যাটাক হয় সাধারণত যখন কেউ ভয় পান, অস্থিরতা ও দু:শচিন্তায় ভোগেন, মৃত্যু ভয় হয়,কোন বিপদের কারণ না থাকলেও ভয় পাওয়া। out of blue যা পূর্ব থেকে আঁচ করা যায় না। অনেকে একে হার্ট অ্যাটাকও মনে করেন। এর স্থায়িত্ব কয়েক সেকেন্ড বা ১০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট এমনকি কয়েক ঘন্টাও হতে পারে। অন্যান্য আরো উপসর্গ হয় যেমন: মাথা ঘোরা, বুকে ব্যাথা, কাঁপা-কাপি,পেটে ব্যাথা,বমিবমি বা গোলানোভাব, ঠান্ডা অনুভূতি হওয়া, ইত্যাদি।এ ডিসওর্ডার চিকিৎসায় ভাল হয় বা কন্ট্রোলে থাকে যেমন: কগনিটিভ বিহেভিওর থেরাপি দিয়ে ভাল চিকিৎসা করা যায় সাথে যদি ঔষধ লাগে নেয়া যেতে পারে।
পূর্ব ঘটনা: সুস্মিতার প্রায় ২ বছর আগে শামীমের সাথে পরিচয় হয়, একটা ট্রিপে। শামিম আমেরিকায় পড়া-শুনা করছে,বাংলাদেশে বিশেষ উদ্দেশ্যে বেড়াতে এসেছেন ২ সপ্তাহের জন্য।বাংলাদেশ থেকে দু’টো ফ্রেন্ডস গ্রুপ মালয়শিয়া ৫ দিনের ভ্রমনে যাচ্ছিল, তাদের সাথে সুস্মিতা ও শামিম যান। দু’জনের মধ্যে পূর্ব পরিচয় ছিল না।দু’জনেরই ব্রেক-আপ ঘটে এবং মানসিক কষ্ট কাটিয়ে উঠতে তারা এ ভ্রমনে যান। সেখানেই তাদের আলাপচারিতা এবং ঢাকায় ফিরে আসার পর দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক হয় এবং পরস্পরকে কথা দেন।সুস্মিতা তার "মা" কে জানান তার পছন্দের কথা।অন্যদিকে সুস্মিতার মা ওর বিয়ের জন্য পাত্র দেখছিলেন।
মূলত শামিম বিয়ে করার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। ওর যার সাথে সম্পর্ক ছিল, সেও আমেরিকায় থাকে। বাংলাদেশে এসে দু’জনের বিয়ে করবার কথা ছিল কিন্তু সে মেয়ে তাকে রিফিউজ করে আমেরিকায় থেকে যায় আসে না এবং সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। অন্যদিকে সুস্মিতা যাকে ভালবাসতো তারা দু’জনই বাংলাদেশের প্রথম সারির একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। ছেলেটির মধ্যে খুব কমপ্লেক্স কাজ করতো, প্রায় সুস্মিতাকে সন্দেহ ও বাজে মন্তব্য করতো এবং তুলনা করতো- “এক সাথে পড়ি তুমি এত ভাল রেজাল্ট করছো! আমি করছি না।আমি চাকরী পাচ্ছি না অথচ তুমি চাকরী পেয়েছ আবার প্রমোশন?” নিশ্চয় তোমার কোন খারাপ সম্পর্ক আছে।দীর্ঘ দিন থেকে এসব চলছিল, বুঝালেও বুঝতে চাইতো না।এক পর্যায়ে একদিন ইউনিভার্সিটির সামনে রাস্তায় সে ছেলেটি ওকে চড় মারে।সব দিক বিবেচনা করে ও ছেলেটির সাথে আর সম্পর্ক রাখে না।
শামিম আমেরিকায় ফিরে যান এবং ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে অন্য ছেলের সাথে সুস্মিতার মা তার বিয়ে ঠিক করেন, সব শুনে ১ সপ্তাহের জন্য শামিম আবার বাংলাদেশে আসেন এবং দু’পরিবারের সম্মতিতে বেশ আয়োজন করে তারা বিয়ে করেন। শামিমদের পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থাত বেশ ভাল। কিন্তু বিয়ের সময় দেনমোহর নিয়ে ও স্টেজ কিভাবে সাজাবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে দু’পরিবারের মধ্যে ভুল বুঝা-বুঝি হয়। সময় বেশি না থাকাতে বিয়ের ১ দিন পর শামিম আমেরিকায় চলে যান। এয়ারপোর্ট থেকে ফিরে আসার পর সুস্মিতাকে শ্বাশুড়ী আর তাদের বাড়ীতে প্রবেশ করতে দেন না।সুস্মিতার মা উনিও খুব আত্মসম্মান সম্মন্ন নারী। এ বিষয় নিয়ে তিনি বেশি উচ্চ বাচ্য করেননি।মেয়েকে নিজের কাছে রাখেন। ওদিকে শামিম তার মাকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়,তার স্ত্রীকে সম্মান দিয়ে বাসায় ফিরিয়ে নিতে।
পড়া শেষ করে শামিমের দেশে ফিরে আসার কথা ছিল, সময় বেশি লাগছে, শেষ না করে দেশেও ফিরতে পারছেনা এবং স্ত্রীকেও নিতে পারছিল না! আর সুস্মিতা দেশেই বেশ ভাল অবস্থানে আছেন। এভাবে ১ বছর পার হয়ে যায়।একদিন এক আত্মীয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন শামিম আমেরিকায় এক মহিলার সাথে রুম শেয়ার করছেন। আরো জানতে পারেন এই সেই মেয়ে “তার পুরান প্রেমিকা”!! যথারীতি শামিম বিষয়টি এড়িয়ে যায়।সুস্মিতা আর কিছুই গ্রহন করতে পারছিলেন না।।মানসিক ভাবে সম্পূর্ন ভেংগে পরেন এবং যখনই সব মনে পড়ে প্যানিক অ্যাটাক হতে থাকে, কিন্তু উনি হাল ছাড়েন নি…..
বি. দ্র: এ সত্য ঘটনাটি কাকতালীয় ভাবে আপনার জীবনের সাথে হয়তো মিলে যেতে পারে। কিন্তু এটি আপনার ঘটনা নাও হতে পারে।আমরা ক্লায়েন্টের ১০০% গোপনীয়তা রক্ষা করি।অন্যের জীবনের ঘটনাগুলোর সাথে নিজের ঘটনার অনেক মিল থাকে। আমরা সব ঘটনার শেষ সমাধান টুকু তুলে ধরতে পারছি না। শুধু ঘটনা গুলো জানাচ্ছি।কেউ শেষ জানতে চাইলে inbox করতে পারেন।অন্য কোন ঘটনা নিয়ে আবার আসবো। সে সময় পর্যন্ত ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।