বর্তমান বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আমাদের যান্ত্রিক ও অতি প্রাকৃতিক করে তুলেছে। প্রাকৃতিক জীবনযাত্রা থেকে মানুষকে কৃত্রিম, অসুস্থ ও ক্ষতিকর জীবন যাপনের প্রতি ঠেলে দিচ্ছে এই তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া। প্রাকৃতিক জীবনযাত্রা থেকে সরে আসার কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষের শরীর-মন-আত্মার ওপর প্রবল বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এর ফলে আমরা অতিমাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ছি। সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য আমাদের নিজেদের বদলাতে হবে। পরিবেশ, ওষুধ ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে, অন্যকে বদলানোর জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের জানতে হবে কোনটি স্বাস্থ্যকর নিরাপদ খাবার আর কোনটি অস্বাস্থ্যকর খাবার, কোনটি নিরাপদ ওষুধ আর কোনটি ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ। আমরা হয়তো জানি না, লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা ওষুধ ছাড়াই সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করতে পারি। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান বর্জন করা, লবণ, চর্বি, ট্রান্সফ্যাট ও বিপুল ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার পরিহার, মদপান না করা, পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করা, পর্যাপ্ত নিরুপদ্রব ঘুম এবং দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন আমাদের অনেক রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। সুস্থ জীবন যাপনের জন্য স্বাস্থ্য পরিচর্যা, রোগ, রোগের উৎপত্তি, প্রতিরোধ ও প্রতিকার এবং ওষুধ কম্পানি ও চিকিৎসকদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সবারই কিছু সাধারণ জ্ঞান অর্জন অবশ্যই দরকার। কারণ শরীর ও রোগ সম্পর্কে জ্ঞান ও সচেতনতা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং রোগকে সুষ্ঠু ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করার মতো শক্তি জোগায়। এই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে রোগ প্রতিহত ও প্রতিরোধ করতে পারলে ওষুধের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমে যাবে।
সুখি সুন্দর জীবন যাপনের জন্য সুস্থতার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মনও ভালো থাকেনা। “সুস্থ দেহে সুন্দর মন” এটি একটি প্রবাদ বাক্য যা সর্বকালে সত্য বলে প্রমানিত। সুস্থতায় সুন্দর, সুন্দরই জীবন তাই দেহ মনে সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য সুস্থ দেহে সুন্দর মন অত্যাবশক। মন ছাড়া দেহ এককভাবে চলতে পারেনা। ব্যায়াম ও খেলাধুলা শুধু দেহের বৃদ্ধি ঘটায় না, মনেরও উন্নতি সাধন করে। শরীর ও মন একে অপরের পরিপূরক। একটিকে ব্যতিরেকে আরেকটির কল্পনা করা যায় না। দেহ ভাল না থাকলে মন খিটখিটে থাকে। সবকিছুতেই যেন অনিহা। সুস্থ দেহে সুন্দর মন। শরীর হচ্ছে মনের আধার। তাই শারীরিক সুস্থতার উপর নির্ভর করে মানসিক সুস্থতা। শারীরিক সুস্থতা, মানসিক বিকাশে ভূমিকা পালন করে। মানসিক সুস্থতার জন্য শারীরিক সুস্থতার প্রয়োজন। শরীর ভালো না থাকলে মন ও ভালো থাকে না। কোন কিছুতেই মন বসেনা এক কাজে মনকে স্থির করা যায় না। আর শারীরিক সুস্থতার প্রধান বাহন হলো ব্যায়াম। ব্যায়াম ছাড়া একজন মানুষের শারীরিক সুস্থতা আশা করা যায় না। ব্যায়াম ও খেলাধুলা শুধু দেহের বৃদ্ধি ঘটায় না, মনের উন্নতি সাধন করে কারণ মন ছাড়া দেহ একক ভাবে চলতে পারে না।
ডা. মো. শামসুল আহসান মাকসুদ বলেন, বর্তমানে কোভিড-১৯–এর প্রাদুর্ভাবে শারীরিক স্বাস্থ্যই যেখানে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা আরও দুরূহ হয়ে পড়ছে। এ জন্য আমাদের শুধু শারীরিক কিংবা মানসিক নয়, বরং সার্বিক সুস্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, সুস্থতা বলতে কিন্তু কেবল শারীরিক কিংবা মানসিক সুস্থতা বোঝানো হয় না। একই সঙ্গে শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক এবং অন্য যেসব প্যারামিটার আছে—সবকিছু মিলেই সার্বিক সুস্থতা বিবেচনা করা হয়। একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে, তাহলে তাঁর শারীরিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে না।
তরুণসমাজকে মাদক থেকে বিরত রাখতে জিম ও সাইক্লিং করা কিংবা মাউন্টেনিয়ারিং বা ট্রেকিংয়ে ব্যস্ত থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।