Call Us: +88 01304-037003

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিন একজন নারীর নিজের যত্ন:

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিন একজন নারীর নিজের যত্ন:

07-Mar-2022

সমসাময়িক দিন-গুলোতে আদতে পূর্বের ধ্যান ধারণা কিন্তু অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এখন বাঙালী নারী আর চার-দেয়ালে সীমাবদ্ধ নেই। ঘরের সীমানা পেড়িয়ে তাঁরা আজ সাফল্যের সিঁড়ি-গুলো বেয়ে উঠে যাচ্ছে সাবলীল-ভাবে, শত বাধা-বিপত্তি ভেঙে দিয়ে। 
নারী স্বাস্থ্য যে শুধুমাত্র শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল তা নয়, এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে দরিদ্রাবস্থা, দৈনন্দিন কর্মসূচী ও পারিবারিক দায়-দায়িত্ব এবং মানসিক স্বাস্থ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য বলতে এমন একটি সামগ্রিক অবস্থা নির্দেশিত হয় যা কেবল রোগের অনুপস্থিতিই বোঝায় না, পাশাপাশি শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সকল দিক থেকেই সম্পূর্ণভাবে ভালোথাকাকেও বোঝায়। নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রসঙ্গ উঠলে সাধারণত কেবল প্রজনন সম্পর্কিত স্বাস্থ্যের কথা ধারণা করা হয়, এবং কিছুদিন পূর্বেও সমাজে এই বিষয়টি ছিলো অনেকটা ট্যাবুর মতো। নারীস্বাস্থ্যে শুধু নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যই অন্তর্গত নয়, বরং নারীর সামগ্রিক শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের বিষয়াবলী ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমানে সমাজের দৃষ্টি তাই নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের বদলে সামগ্রিক নারীস্বাস্থ্যের দিকে ফেরানো একটি সময়ের দাবী।
ব্যস্ততা থাকবেই। নারী হিসেবে তাঁদের দায়িত্বগুলো পালন করে যেতে হবে। এই ব্যাপারে হয়তো কোন বিতর্কের সুযোগ নেই। কিন্তু পাশাপাশি তাঁদের নিজেদের যত্নের দিকেও খেয়াল রাখাটা সমান, কখনোবা হয়তো একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবার যত্নের সাথে, যত্ন হোক নিজেরও। 
চলুন জেনে নিই, নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিন একজন নারী নিজের যত্নে কি কি করতে পারেন।
১- খাদ্যাভ্যাস :
শারীরিক, তথা মানসিক সুস্থতার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে রুটিন-মাফিক, পরিমিত খাদ্যাভ্যাস। বয়সের সাথে সাথে বিভিন্ন হরমোন-জনিত কারণে মেয়েদের একটু মোটা হয়ে যাবার ধাঁচ থাকে। পরবর্তীতে শরীর ভারী হয়ে যাবার জন্য নানাবিধ শারীরিক জটিলতা দেখা যায়। আর এই শরীর ভারী হয়ে যাবার দুশ্চিন্তা সঠিক খাদ্যাভ্যাস থাকলে সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যায়।
অনেকেই এটা কঠিন মনে করলেও পুরো ব্যাপারটিই আসলে অভ্যাসের উপর নির্ভরশীল। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে পুরো ব্যপারটিই হয়ে ওঠে আসলেই সহজ। এছাড়া কি খাবার খাচ্ছেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। হাই-প্রোটিন ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে খাদ্য-তালিকায় ভেজিটেবল, ফল-সহ পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন।
কি খাচ্ছেন, সেটির সাথে সমান গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঠিক সময়ে খাচ্ছেন কি না। সকালের ব্যস্ততায় অনেক সময়ই দেখা যায়, অনেক নারীই ঠিক মতো ব্রেকফাস্ট না করেই কাজে চলে যাচ্ছেন। আবার হয়তো সময় মতো লাঞ্চ করছেন না। এটা একেবারেই ঠিক নয়। তাই একটু সচেষ্ট হয়ে রুটিন-মাফিক খাওয়ায়া-দাওয়া করলে নিজের যত্ন অনেকাংশেই নিশ্চিত করা যায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, যেটা অনেক সময়ই নারীরা খেয়াল করেন না, তা হোলো পর্যাপ্ত পানি পান করা। এ ব্যাপারেও একটু খেয়াল করলেই সুস্থতা অনেকটাই নিশ্চিত করা যায়।
২- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম:
দায়িত্বের চাপে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে অতিরিক্ত টেনশন। যা প্রভাব ঘুমে। কিন্তু পর্যাপ্ত ও শান্তির ঘুম না হলে মানসিক প্রশান্তি আসবে না। শুধু পর্যাপ্ত ঘুম নয়, প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রামেরও। এক্ষেত্রে রুটিন-মাফিক বেশি রাত না জেগে তাড়াতাড়ি বিছানায় চলে যাওয়া এবং খুব ভোরে দিন শুরু করলে শরীর ও মন দুটোই চাঙা রাখা সম্ভব। সকাল সকাল দিন শুরু করলে সারাদিনে কাজ শেষ করার সময়ও বেশি পাওয়া যায়। 
৩- শৌখিন কিছু করা:
নারী মানে ব্যস্ততা থাকবেই। কিন্তু এরপরও নিজেদের মনে আনন্দের খোরাকের জন্যই যদি মাঝে মাঝে কিছুটা সময় তাঁরা নিজেদের পছন্দ মতো কিছু একটা করা সত্যিই উচিত। মনে রাখা জরুরি, জীবনটা শুধু দায়িত্ব পালনের জন্যই নয়- পাশাপাশি এনজয় করাটাও সবারই প্রাপ্য। 
৪- এক্সারসাইজ/মেডিটেশন:
সুস্থ শরীরের সাথে চাই প্রফুল্ল মন। আর প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা হালকা এক্সারসাইজ অথবা মেডিটেশন সত্যিই শরীর ও মন, দুটোই নিমিষেই করে ফেলতে পারে চাঙা। এক্সারসাইজ বলতে একেবারেই জিম-এ গিয়ে হেভি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে শরীরচর্চা করতে হবে এমনটি কিন্তু নয়।
প্রতিদিন ভোরবেলা কানে হেডফোন লাগিয়ে নিয়ে নিজের পছন্দের গান শুনতে শুনতে একটানা কোন পার্ক অথবা নিদেনপক্ষে ঘরের ভেতরেই হেঁটে বেড়ালেই শরীর অনেকটাই ফিট রাখা সম্ভব। প্রতিদিন এক্সারসাইজ-এর জন্য হার্ট-রেট বজায় থাকবে, শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াও স্বাভাবিক থাকবে। যার এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। পরবর্তীতে এজিং-এর মতো ভাবনাদায়ক বিষয়গুলো খুব সহজেই শুধুমাত্র একটিভ লাইফস্টাইল এবং এক্সারসাইজ-এর মাধ্যমেই এড়িয়ে যাওয়া যায়।
লাইফস্টাইল-এর কথা বলতে গেলে, বর্তমানে অনেক নারীকেই মেডিটেশন করার ব্যাপারে উৎসাহী হতে দেখা যাচ্ছে। ভাবনায় আটকে না থেকে শুরু করে দেয়াই ভালো। আর মেডিটেশন যদি নাও শুরু করা হয়, তবে দেহ-মনের আড়ষ্টতা দূর করতে বডি ম্যাসাজ-ও বেশ কার্যকরী।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। সুস্থ মন সুস্থ জীবন। সুস্থ জীবন উপভোগ করতে এগিয়ে আসুন এবং যোগাযোগ করুন "এসো নিজে করি" তে।



More Blog


কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি): ধারণা, কার্যপদ্ধতি ও মানসিক সুস্থতায় ভূমিকা
19-Mar-2025

কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি) মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এবং বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত পদ্ধতিগুলোর... read more

সিজোফ্রেনিয়া: লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও সিবিএসএসটি (গ্রুপ ট্রেনিং)
19-Mar-2025

সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia) একটি গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতা, যা একজন ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণকে প্রভাবিত... read more

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু প্রয়োজনীয় টিপসঃ
28-May-2022

আপন মনের ইচ্ছার বাইরে খারাপ কোন কিছু ঘটলে বা ঘটতে থাকলেই মূলত আমরা মানসিক অস্থিরতায় ভুগি। যে কেউ মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে পারে তাই... read more