Call Us: +88 01304-037003

রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন:

রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন:

27-Feb-2022

ইদানিং জনজীবন স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বেশি জটিল হয়ে পড়েছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়েছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব নিকাশ মেলানো যাচ্ছে না। সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করতে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে এবং যে কোন ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। রাগ শুধুমাত্র আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটি সম্পর্কের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। শুধুমাত্র রাগের জন্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার প্রিয় সম্পর্কটি! 
প্রতিটি মানুষেরই রাগ থাকে। রাগ স্বাভাবিক অনুভূতি। তবে তার প্রকাশ অনেক সময়েই অস্বাভাবিক হয়ে যায়। অনেকের আবার অল্পেই রাগ হয়। তবে অতিরিক্ত রাগ মোটেও ভালো নয়। এর ফলে নিজের কিংবা অন্যের জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। হঠাৎ করে রাগের মাথায় কোনো কথা বা কাজ করে বসবেন না, সময় নিন, প্রয়োজন হলে সেই মানুষটার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বন্ধ রাখুন অথবা রাগের কারণটি থেকে নিজের মনকে অন্যদিকে সরিয়ে নিন। আপনি যখন শান্ত হয়ে যাবেন, আপনার রাগের কারণগুলো তার সামনে তুলে ধরুন, ততক্ষণে অপরজনের মাথাও ঠান্ডা হয়ে যাবে, সে ভালোভাবে আপনার কথা বুঝতে পারবে। 
বিশেষজ্ঞরা রাগ কমানোর নানা উপায় বলেন। এর মধ্যে ১০টি উপায় যে কেউই রাগ কমাতে পারেন। দেখে নেওয়া যাক কী কী বলেন বিশেষজ্ঞরা।
১। মনকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করুন, এক থেকে দশ পর্যন্ত উল্টো করে গুনতে পারেন, তাহলে মস্তিষ্ককে কিছুটা অন্যদিকে ব্যস্ত রাখা যাবে। এটা রাগ কমাতে সাহায্যে করে।
২। আপনি যখন শান্ত হয়ে যাবেন, আপনার রাগের কারণগুলো তার সামনে তুলে ধরুন, ততক্ষণে অপরজনের মাথাও ঠান্ডা হয়ে যাবে, তিনিও ভালোভাবে আপনার কথা বুঝতে পারবেন।
৩। নিয়মিত এক্সারসাইজ করতে পারেন। এতেও রাগের প্রবণতা কমে। ক্ষণিকের রাগ কমাতে কিছুটা পথ হাঁটতে পারেন।
৪। হঠাৎ করে রাগের মাথায় কোনো কথা বা কাজ করে বসবেন না, সময় নিন, প্রয়োজন হলে সেই মানুষটার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বন্ধ রাখুন অথবা রাগের কারণটি থেকে নিজের মনকে অন্যদিকে সরিয়ে নিন।
৫। আপনি যখন রেগে আছেন স্বাভাবিকভাবেই আপনার মধ্যে নমনীয়তা কাজ করবে না, আর তাই হঠাৎ করে এমন কিছু কথা বলে ফেলতে পারেন যা অন্যের কষ্টের কারণ হতে পারে, তাই রেগে থাকার সময়ে কোনো কথা না বলাই ভালো।
৬। রাগ কমাতে অনেকে যে কোন নেশার আশ্রয় নেয়,  ধূমপান করেন। অন্য নেশাও করেন। কিন্তু  রাগ কামনোর জন্য এটা ভালো পথ নয়। তাতে মনটা আরো বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। 
৭। নিজেকে নিয়ে বেশি হিসাব করতে গেলে রাগ আরো বাড়বে, তাই তাৎক্ষণিক ব্যাপারটা মেনে নিলে সমস্যা অনেকটা কমে যায়।
৮। যে কোনো সমস্যারই সমাধান আছে। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই সেটা বের করা যায়। সেটাই চেষ্টা করুন।
৯। রাগ বা টেনশন কমানোর জন্য খানিকটা হাসি ঠাট্টা করা যেতে পারে, তাতে মনটা হালকা হয়ে যায়।
১০। সবচেয়ে ভালো উপায় হল নিয়মিত মেডিটেশন। এতে শরীরের অন্য উপকারের সঙ্গে সঙ্গে রাগ নিয়ন্ত্রণও হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে একটু দেখে আসি:
ইসলাম রাগকে একটি মানবীয় ত্রুটি হিসেবে উল্লেখ করে তাকে দমন করতে বলেছে।  
আর মুসলিম শরীফের এক হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে রাগের সময় নিজেকে সামলে নিতে পারে, সেই প্রকৃত বাহাদুর। আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, রাগ দেখানোর সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আল্লাহতায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন পুরস্কৃত করবেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-কে বলল, ‘আমাকে উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘রাগ কোরো না।’ সে ব্যক্তি কয়েকবার এ কথা বলল, রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘রাগ কোরো না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১১৬)
আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা দুই ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর কাছে বসে পরস্পর গালাগাল করছিল। তাদের একজনের চোখ লাল হয়ে উঠল ও গলার শিরা ফুলে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমি একটি বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে তবে তার এ অবস্থা কেটে যাবে। সে বাক্যটি হলো, আমি আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮১২)
শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো রাগ হয় তখন সে যদি দাঁড়ানো থাকে, তবে যেন বসে পড়ে। যদি তাতে রাগ চলে যায় ভালো। আর যদি না যায়, তবে শুয়ে পড়বে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৪)
ওজু করা নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। নিশ্চয় পানির দ্বারা আগুন নির্বাপিত হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয় সে যেন অজু করে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৬)
চুপ থাকা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। কঠিন কোরো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৪৭৮৬)
কোরআন ও হাদিসে রাগ দমনের একাধিক উপকারিতা বর্ণনায় এসেছে। রাগ দমনকারীর জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি রাগ করবে না, তাহলে তোমার জন্য জান্নাত।’ (সুনানে তিবরানি, হাদিস : ২১)
অন্য হাদিসে রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে ব্যক্তি কুস্তি লড়ে অপরকে ধরাশায়ী করে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিই শক্তিশালী, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৮০৯)
আল্লাহ তাআলা রাগ দমনকারীকে ভালোবাসেন। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং রাগ দমনকারীগণ ও মানুষকে ক্ষমাকারীগণ। আল্লাহ অনুগ্রহকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)
আমরা বিষয় গুলোকে একটু মিলিয়ে দেখি এবং বোঝার চেষ্টা করি। রাগ করে কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা যাবে না। নিজের জীবন উপভোগ করুন এবং সহজেই রাগকে কন্ট্রোল করতে সাহায্য নিন, আমাদের "এসো নিজে করি" তে। আমরা আছি আপনার পাশে।
 



More Blog


কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি): ধারণা, কার্যপদ্ধতি ও মানসিক সুস্থতায় ভূমিকা
19-Mar-2025

কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি) মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এবং বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত পদ্ধতিগুলোর... read more

সিজোফ্রেনিয়া: লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও সিবিএসএসটি (গ্রুপ ট্রেনিং)
19-Mar-2025

সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia) একটি গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতা, যা একজন ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণকে প্রভাবিত... read more

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু প্রয়োজনীয় টিপসঃ
28-May-2022

আপন মনের ইচ্ছার বাইরে খারাপ কোন কিছু ঘটলে বা ঘটতে থাকলেই মূলত আমরা মানসিক অস্থিরতায় ভুগি। যে কেউ মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে পারে তাই... read more