পারিবারিক সমস্যাগুলো তৈরিই হয় ছোটখাটো মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে। একজনের ভুল কথা পারিবারিক সমস্যাকে বড় করে তুলতে পারে। নিজেদের ছোটখাটো ভুলগুলো সামলে সামনে এগিয়ে নিতে বড়দের যথাযথ হস্তক্ষেপ ভালো ফল আনে। সংসারে অশান্তি শুরু হয় ছোটখাটো বিষয় নিয়ে দুই পরিবারে সৃষ্ট সমস্যা দেখা দিলে, অহেতুক ভুল বুঝলে ও খারাপ আচরণ করলে।যেকোনো পরিবারেই মাঝে মাঝে টুকটাক ঝক্কি-ঝামেলা হতেই পারে। এর মধ্যে রয়েছে দাম্পত্য কলহ, ভাই-বোনদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা, অভিভাবক-সন্তানের মতানৈক্য, খাদ্যাভ্যাস বিকার, আচরণগত বৈকল্য কিংবা মাদকাসক্তির মতো গুরুতর সমস্যা। এমনকি পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যের অ্যালঝেইমার রোগও পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যদি না সেটির প্রতি সঠিক খেয়াল না দেয়া হয়।
এই সমস্যাগুলোর যদি সঠিক সমাধান না করা হয়, তবে তা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মনে মানসিক উদ্বেগ, চাপ এবং দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করতে পারে। একপর্যায়ে গোটা পরিবারই কোনো না কোনো মানসিক বিকারে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। তাই ফ্যামিলি থেরাপিই হলো সর্বোৎকৃষ্ট উপায়, যার সহায়তা নিয়ে এসব সমস্যা নিরসন করা সম্ভব।
ফ্যামিলি থেরাপি কী?
ফ্যামিলি থেরাপি মূলত একধরনের গ্রুপ সাইকোথেরাপি, যেখানে একটি পরিবারের সদস্যদের আচরণকে বর্ণনা ও ব্যাখা করা হয়। সেই সাথে সদস্যদের আচরণ কীভাবে ঐ পরিবারের সম্পর্ক এবং স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করে তা-ও ব্যাখা করে এই থেরাপি। রোগী এবং তার পরিবার উভয়ের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়, যা রোগীর সুস্থতার জন্য অতীব জরুরি।
কীভাবে কাজ করে ফ্যামিলি থেরাপি?
একজন রেজিস্টার্ড ফ্যামিলি থেরাপিস্ট ফ্যামিলি থেরাপি প্রদান করে থাকেন। সর্বপ্রথমে থেরাপিস্ট সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে ঠিক কী কারণে পরিবারে অশান্তি বা কলহ সৃষ্টি হচ্ছে, যা রোগীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারপর তিনি ও রোগীর পরিবার মিলে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করেন। চিকিৎসার অংশ হিসেবে প্রথমেই রোগীর পরিবারের লোকজনকে সমস্যার উৎস এবং প্রকটতা সম্বন্ধে বোঝানো হয়। সেই সাথে রোগীর বিপদজনক হিংস্র আচরণ সামাল দেওয়া এবং নিজের প্রিয়জনের পাশে দাঁড়ানোর গুরুত্ব বোঝানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে যারা কোনো মানসিক রোগীর সাথে একই ছাদের নিচে বসবাস করছেন, তাদের জন্য এই থেরাপি খুবই প্রয়োজনীয়।
কখন নেবেন ফ্যামিলি থেরাপি?
নিচের পরিস্থিতিগুলোর শিকার হলে বুঝতে হবে, ফ্যামিলি থেরাপি নেয়ার সময় চলে এসেছে:
১. পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও মতানৈক্য থেকে থাকলে।
২. পরিবারের সদস্যদের কেউ মাদকাসক্ত হলে।
৩. পরিবারের সদস্যদের কেউ মানসিক বিকারগ্রস্ত হলে।
৪. ভাই-বোনদের মধ্যে কলহ থাকলে।
৫. পরিবারে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সদস্য থাকলে।
৬. একান্নবর্তী পরিবার সংক্রান্ত জটিলতা থাকলে।
৭. পারিবারিক অস্থিরতা এবং অবিশ্বস্ততা থাকলে।
ফ্যামিলি থেরাপি কীভাবে সহায়তা করে?
১. পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিরসন এবং সংঘাত দমনের পথ খুঁজে দেয়।
২. পারিবারিক যোগাযোগ এবং মিথঃস্ক্রিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি করে।
৩. পারিবারিক সহমর্মিতা এবং সহযোগিতার চর্চা গড়ে তোলে।
৪. পারিবারিক সমৃদ্ধি এবং পরিবর্ধনে একজন সদস্যের কী কী ভূমিকা রয়েছে সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দেয়।
৫. আবেগ নিয়ন্ত্রণ কলাকৌশলের সাথে পরিচিত করায়
বিশ্বাস এবং ভরসা স্থাপনে সহায়তা করে।
৬. একজন শিশু যাতে একটি ইতিবাচক এবং সহায়ক পারিবারিক পরিবেশ পায়, তা নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখে।
৭. পরিবারের নিস্ক্রিয় সদস্যদের পারিবারিক বন্ধন এবং দায়দায়িত্ব সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে।
"এসো নিজে করি" র সাথেই থাকুন। যোগাযোগ করুন।
কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি) মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এবং বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত পদ্ধতিগুলোর... read more
সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia) একটি গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতা, যা একজন ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণকে প্রভাবিত... read more
আপন মনের ইচ্ছার বাইরে খারাপ কোন কিছু ঘটলে বা ঘটতে থাকলেই মূলত আমরা মানসিক অস্থিরতায় ভুগি। যে কেউ মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে পারে তাই... read more