Call Us: +88 01304-037003

অবসাদ কি? অবসাদ দূরীকরণের উপায়:

অবসাদ কি? অবসাদ দূরীকরণের উপায়:

29-Jan-2022

সাধারণভাবে মানসিক স্বাস্থ্য বলতে- "Full and harmonious functionality of the whole personality"-কে বোঝায়। খেলাধুলা যেমন আমাদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখে, তেমনিভাবে মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের দেহ ও মনের  রক্ষায় সহায়তা করে। দেহের কোনো অঙ্গের ক্রিয়া সঠিকভাবে না হলে যেমন দৈহিক অসুস্থতা দেখা যায়, তেমনি মানসিক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে না হলে মানসিক অসুস্থতার সৃষ্টি হয়।  ক্রীড়াক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর জীবনে প্রতিযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এই মানসিক অসুস্থতা প্রত্যক্ষ হয়। খেলাধুলা শুধুমাত্র শারীরিক কসরত নয়, এর সাথে আনন্দ ও পরাজয়ের বেদনাও জড়িত থাকে। তবে যেহেতু একজন ক্রীড়বিদ শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে, সেজন্য তাকে মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে হয়। কারণ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা একে অপরের পরিপূরক। 
জয়-পরাজয়ের এই স্বাভাবিক ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে না নিতে পারলে চাপের সৃষ্টি হয় এবং তার কর্মকাণ্ডে নানা রকম অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে ক্রীড়া শিক্ষক বা প্রশিক্ষকদের বিজয়ী বা বিজিত খেলোয়াড়দের সাথে একত্রে কাজ করে তাদের মানসিক সাস্থ্য বা মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখার সর্বাত্মক চেষ্টার প্রয়োজন হয়।
অবসাদ:
দীর্ঘক্ষণ একই কাজ করার ফলে সেই কাজের প্রতি মানুষের দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এ পরিবর্তনের ফলে ব্যক্তির কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। মানসিক ও শারীরিক অবস্থার এ পরিবর্তনকেই ক্লান্তি বা অবসাদ বলা হয়। তাই অবসাদ বলতে কর্মব্যক্তির শিথিলতা বা কর্মশক্তি হ্রাস পাওয়াকেই বুঝায়। কর্মক্ষমতা হ্রাসই হলো অবসাদের সর্বজনীন কারণ।মনোবিদগণ অবসাদের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। কেউ বলেছেন- 'কর্মক্ষমতা হ্রাসই হলো অবসাদ'। কারোর মতে- 'কাজ করার জন্য কর্মক্ষমতা হ্রাসই হলো অবসাদ, তাই যে কোনো ধরণের কর্মক্ষমতা হ্রাসই হলো অবসাদ'। তবে বিশ্লেষণধর্মী সংজ্ঞা হলো- ' এক নাগাড়ে কোনো কাজ করার দরুন শরীরে কর্মক্ষমতার যে অবনতি হয় তাকে অবসাদ বলা যেতে পারে'।
মনোবিদগণ অবসাদকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন- (ক) দৈহিক অবসাদ ও (খ) মানসিক অবসাদ।
দৈহিক অবসাদ:
খুব বেশি সময় ধরে দৈহিক পরিশ্রম করলে যে অবসাদ আসে তাকে দৈহিক অবসাদ বলে। এ অবসাদ দৈহিক পেশিঘটিত ও ইন্দ্রিয়গত। প্রত্যেক ব্যক্তির দৈহিক শ্রমের একটি সীমা আছে, শ্রম এ সীমা অতিক্রম করলে অবসাদ দেখা দেয়। সাধারণ অবস্থায় কাজের সময় যে সব দৈহিক চাহিদা অনুভূত হয় তা দেহ নিজেই পূরণ করে নেয়। যেমন দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ার ফলে অতিরিক্ত অক্সিজেনের চাহিদা মেটানো যায়। আবার রক্তের চাপ ও হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলে অতিরিক্ত শর্করা নিঃসৃত হয়। তবে কাজটি বেশি শ্রমসাধ্য হলে, ব্যক্তির সহনশীলতা কম হলে, অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরমে ব্যক্তির শারীরিক ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে অবসাদ দেখা দেয়।
মানসিক অবসাদ:
মানসিক কাজ অনেকক্ষণ ধরে করতে থাকলে মানসিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং অবসাদ দেখা দেয়। যেমন- অনেক সময় ধরে এক নাগাড়ে অংক করতে থাকলে একটা পর্যায়ে অংক করার জন্য বিচার শক্তি, চিন্তাশক্তি ও নির্ভুল করার ক্ষমতা কমতে থাকে। এই কমতে থাকা অর্থাৎ পরিবর্তনের এই অবস্থাকে মানসিক অবসাদ বলে। এছাড়া ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দ, মানসিক অবস্থার তারতম্য, পরিবেশগত কারণেও অবসাদ আসতে পারে। তবে দৈহিক ও মানসিক কাজকে যেমন সম্পুর্ণভাবে পৃথক করা যায় না, তেমনি দৈহিক ও মানসিক অবসাদকে আলাদা করা যায় না। অনেকক্ষন দৈহিক পরিশ্রম করলে মানসিক অবসাদ আসতে পারে, তেমনি একটানা মানসিক কাজ করলে দৈহিক অবসাদ আসে।
শিক্ষার্থীর উপর মানসিক অবসাদের প্রভাব:
শিক্ষার্থী বলতে এখানে শারীরিক শিক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের বুঝানো হয়েছে। শারীরিক শিক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের যে দৈহিক অবসাদ আসে তা তাদের অবসাদের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। তাদের শারীরিক পরিশ্রমের ফলে বিপুল পরিমাণ ঘাম নিঃসরণ, শারীরিক অঙ্গ-সঞ্চালন এবং একাগ্রতার উপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু যখন তারা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন যে সব প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায় তা নিম্নরূপঃ
১/ তাদের কর্মসূচি পালনকালে ভুল হতে থাকে।
২/ তারা নিজেদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে।
৩/ তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় থাকে না।
৪/ তারা কাজের ছন্দ হারিয়ে ফেলে এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।
৫/ তারা অমনোযোগী হয়ে পড়ে, কর্মসূচি বাস্তবায়নের কলাকৌশল সহজে বুঝতে পারে না।
৬/ তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। 
মানসিক অবসাদ দূরীকরণের উপায়:
দৈহিক ও মানসিক শক্তি ক্ষয়ের ফলেই যেহেতু অবসাদের উদ্ভব হয়, তাই দেহ ও মনের সুস্থতা ও সক্রিয়তা আনয়নের মাধ্যমে অবসাদ দূর করা সম্ভব। অবসাদ দূরীকরণের জন্য আমরা নিচের বিষয়গুলোর উপর গুরুত্বারোপ করতে পারি।
১/ কর্মসূচির প্রতি অনুরাগ সৃষ্টিঃ শিক্ষার্থীর যদি কর্মসূচির প্রত্তি আগ্রহ সৃষ্টি হয়, তাহলে তাড়াতাড়ি অবসাদ আসে না।
২/কর্মসূচির একঘেয়েমিতা পরিহারঃ বিরক্তিকর কর্মসূচির একঘেয়েমিতা শিক্ষার্থীকে অবসাদগ্রস্ত করে তোলে। অন্যদিকে কর্মসূচিকে আনন্দপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময় করলে অবসাদ দূর করা যায়।
৩/ প্রেষণাঃ কর্মসূচিতে প্রেষণা থাকলে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে পালন করবে এবং শীঘ্র অবসাদ আসবে না।
৪/ অতিরিক্ত চাপমুক্ত কর্মসূচি পরিহারঃ সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীকে চাপ দেওয়া যাবে না।
৫/ বিশ্রাম ও ঘুমঃ দেহের ক্ষয়পূরণের জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন। তেমনি অবসাদ দূর করার জন্য প্রয়োজন পরিমিত বিশ্রাম ও ঘুম। বিশ্রাম ও ঘুমের ফলে দেহ ও মস্তিষ্কের অবসাদ দূরীভূত হয় এবং পুনরায় নতুন উদ্যোগে কাজ করার স্পৃহা জন্মে।
৬/ পরিবেশগত কারণঃ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অর্থাৎ স্যাঁতস্যাঁতে, আলো-বাতাসের অভাব এমন পরিবেশ পরিহার করে খোলামেলা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে অংশগ্রহণ করবে এবং মানসিক অবসাদের কোনো প্রভাব পড়বে না।
 ঘন ঘন অবসাদে ভুগলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এটা থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি। ওষুধ ছাড়াই সহজেই আপনি রেহাই পেতে পারেন এ সমস্যা থেকে। 
এছাড়াও রয়েছে: 
১. পুষ্টিকর খাবার : 
মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। তাই সময়মতো পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এতে শরীর ও মস্তিষ্কে জরুরি পুষ্টি পৌঁছাবে। এর ফলে অবসাদ সহজে কাবু করতে পারবে না আপনাকে।
২. পর্যাপ্ত ঘুম : 
দেহ-মনকে শান্ত ও শিথিল রাখতে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ খুব প্রয়োজন। এ জন্য ভালো ঘুম অপরিহার্য। তাই যতটা ঘুমালে ভালো লাগে, প্রশান্তি বোধ জাগে ততটা ঘুমিয়ে নিন। রাত জাগার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
৩. ভ্রমণ : 
অবসাদে ভুগলে ভুলেও নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখবেন না। নিজেকে ঘরে আটকে না রেখে বাইরে বেরিয়ে পড়ুন। কারো সঙ্গ ভালো না লাগলে একাই ঘুরে আসুন। অক্সিজেন ও সূর্যের আলো অবসাদকে দূরে রাখে।
৪. নিজেকে সচল রাখা : 
অবসাদে ভুগলে মস্তিষ্কে কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ হয়। এই ‘স্ট্রেস হরমোন’ কমাতে নিজেকে সচল রাখা প্রয়োজন। ব্যায়াম করুন কিংবা হাঁটুন। এতে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাবে; অবসাদ কমে যাবে অনেকটাই।
 



More Blog


কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি): ধারণা, কার্যপদ্ধতি ও মানসিক সুস্থতায় ভূমিকা
19-Mar-2025

কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি) মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এবং বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত পদ্ধতিগুলোর... read more

সিজোফ্রেনিয়া: লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও সিবিএসএসটি (গ্রুপ ট্রেনিং)
19-Mar-2025

সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia) একটি গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতা, যা একজন ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণকে প্রভাবিত... read more

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু প্রয়োজনীয় টিপসঃ
28-May-2022

আপন মনের ইচ্ছার বাইরে খারাপ কোন কিছু ঘটলে বা ঘটতে থাকলেই মূলত আমরা মানসিক অস্থিরতায় ভুগি। যে কেউ মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে পারে তাই... read more