Call Us: +88 01304-037003

মা-বাবা ও সন্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু যেভাবে

মা-বাবা ও সন্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু যেভাবে

26-Jul-2021

সোনিয়া পারভীন

পৃথিবীতে বসচেয়ে অকৃত্রিম ভালবাসা তৈরী হয় মা, বাবা ও সন্তানের মধ্যে। ব্যতিক্রম ও দেখা যায়। তবে সেটা খুবই নগন্য।তারপরও কেন তাদের মধ্যে বোঝাপোড়ায় ঘাটতি দেখা দেয় এবং কেন শুরু হয় নানা অশান্তি? কারণগুলো কি? আমরা যদি এর কারণগুলো অনুসন্ধান করি তাহলে দেখতে পাই :-

সন্তান যখন তাদের বয়:সন্ধিকাল অতিক্রম করে তখন তাদের মধ্যে নানা শরীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তিত বিষয়গুলি সম্পর্কে তারা যদি আগে থেকে সঠিক ভাবে জানতে পারে - তাহলে পড়াশুনার চাপ, শিক্ষকদের ভয়, অভিভাবকদের প্রত্যাশা সব কিছুর সাথে তারা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে।কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র।তাদের মধ্যে নানা বিধ ভীতি যেমন: পরীক্ষাভীতি, আত্মবিশ্বাসহীনতা, হীনমন্যতা বিষন্নতা, একাকিত্ব, বড়দের প্রতি অসম্মান দেখান ইত্যাদি ক্ষতিকর আচরণগুলো বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে।সবার ক্ষেত্রেই যে এসব ঘটে তা না। কারো কারো মধ্যে হয়তো বেশি দেখা যায়। যে সব বাবা-মা সচেতন এবং সন্তানরা একটা গণতান্ত্রিক পারিবারিক বলয়ে বা একটা পারস্পরিক সম্প্রিতীর বন্ধনের মধ্যে বেড়ে উঠে, সেসব পরিবারের সন্তানদের মধ্যে এসব সমস্যা কম দেখা যায়।

কার্যত শিশুরা যখন কৈশোরে পৌঁছায় তখন তাদের মধ্যে একটা মারমুখি আচরণ ও অবাধ্যতা দেখা যায়। এক কথা বার বার বললেও শুনতে চায় না। এক জায়গায় বসলে আর সহজে উঠানো যায় না। কি যেন সারাক্ষন চিন্তা করে।অভিভাবকরা তখন ব্যস্ত হয়ে বা চিন্তিত হয়ে আরো কিছু উপদেশ দিয়ে থাকেন।উপদেশ বা ভাল কথা সন্তানদের অবশ্যই শিক্ষা দিতে হবে। কিন্তু আগে তাদের বুঝতে হবে কোন রোগের কি চিকিৎসা বা কি ঔষধ বা উপদেশ দিতে হবে।এসব না বুঝেই অভিভাবকরা ধৈর্য হারিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সন্তানদের দোষ খুঁজে বের করেন।আর কখনও বা বলতে থাকেন “তুই অবাধ্য হয়ে গেছিল” কখনও বা না জেনেই “ নিশ্চয় তুই খারাপ ছেলে/মেয়েদের সাথে মিশে খারাপ হয়ে যাচ্ছিস” ইত্যাদি।এসবই হচ্ছে ধারণার কথা।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্তানরা হয়তো এগুলো কিছুই বুঝতে পারছেনা।যেহেতু বাবা বা মা তাদের এসব কথা বলছে তখন তাদের মধ্যে একটা নেতিবাচক ছবি তৈরী হয়ে যাচ্ছে।কারণ পৃথিবীটা হচ্ছে একটা বড় নাট্যশালা আপনি যাকে যে রোল দেবেন না জেনেই সে সেই রোলে অভিনয় শুরু করবে।হয়তো কিছুটা হবাক হচ্ছেন ।কিন্তু না এসবই মৌলিক বৈশিষ্ট। কোথাও এর কিছুটা পরিবর্তন হয় কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসবই সত্যি। আর তাই সন্তানরাও তাদের নিজেদের অজান্তেই সেসব দুষ্ট বা অবাধ্য ছেলে বা মেয়ের মত আচরণে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। এবং এক সময় অভিভাবকরা চিন্তায় পড়ে যান “কি হলো আমার প্রিয় সন্তানের”!! তারা কেন এমন অচেনা আচরণ করছে! হঠাৎ কেন এই পরিবর্তন? আমরা বলবো এসবই বাস্তব ও স্বাভাবিক লক্ষন।

অন্যদিকে সন্তানরাও ভাবছে আগেই ভাল ছিলাম, বড় হবার পর মা-বাবা এখন আর লক্ষি সোনামনি বলে আদর করে না। সব কাজেই বাঁধা দেয়।বায়না ধরলে বলে তুমি বড় হয়ে গেছ, এখন কেন এসব চাচ্ছ? কেন তুমি বোঝ না? তোমার অনেক দায়িত্ব বেড়েছে এখন তুমি বড় হয়েছ ইত্যাদি।আবার কোন কাজ একাও করতে দেয় না। কিছু বলতে গেলে বলে আগে “পড়” পরে শুনবো।কোথাও আগের মতো বেড়াতে নিয়ে যায় না শুধু পড় আর পড় বলে!

বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে দূরত্ব বা দ্বন্দ্বের সূত্রপাত এভাবেই শুরু হয়। এক সময় সন্তানরা লুকাতে শুরু করে তাদের মনের ও দৈনন্দিন দিনের ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা।কখনও বাড়তে থাকে ভুলের মাত্রা।কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যায়।কোন কোন ক্ষেত্রে হয়না। ঘুণপোকার মত ভিতরে ভিতরে কাটতে থাকে। এর প্রভাব বা ফল অনেক দেরিতে দেখা দেয়।তখন আর ভাল কিছু করার সুযোগ থাকেনা।

তাহলে সমস্যাটা কোথায়? কেন কৈশোরে সন্তানরা এতটা বেয়ারা বা অবাধ্য হয়ে উঠে? উত্তর প্রমত: এসব-ই বয়:সন্ধি কালীন পরিবর্তন।

কারণ আপনার সন্তানকে বুঝতে দিতে হবে এ বয়সে মানসিক পরিবর্তন স্বাভাবিক ব্যাপার।কিছুদিন পরই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।এবং তাদের বুঝিয়ে বলুন শরীরের সীমানা ও শরীরের নিরাপত্তা। বাবা- মা ছাড়া অন্য বড় আত্মীয়- স্বজন, গৃহ - শিক্ষক বা অন্যকেউ যেন তাদের আদরের ছলে শরীরের গোপন জায়গায় হাত দিতে না দেয় বা অশালীন কথা শোনা থেকে বিরত থাকে।তারা যেন কোনটা ভাল বা কোনটা মন্দ তা বুঝতে শিখে।যে কোন বিষয়ে আপনার সন্তান যেন আপনার সাথে খোলা মেলা কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠে।কারণ বাবা/মা-ই হচ্ছে সন্তানের প্রথম ও অকৃত্রিম ভাল বন্ধু।

কিশোর বয়সে তারা জানতে চায় ও বুঝতে চায় না জানা অনেক কিছু....তারা কিভাবে জন্মাল বা নারী ও পুরুষের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক কিভাবে হয় ইত্যাদি। সময় মতো সন্তানদের বাবা বা মা নিজেরাই এসব প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক জন্ম রহস্য বা অনান্য বিষয়গুলো খুলে বলুন।কিন্তু অধিকাংশ সন্তানের ক্ষেত্রেই দেখা যায় অভিভাবকরা বিষয়গুলো চেপে যান। অভিভাবকরা মনে করেন, বিষযগুলো তারা যেভাবে জেনেছেন সন্তানরাও সেভাবে জানুক।কেউ কেউ আবার সংকোচে বা লজ্জায় তাদের সন্তানদের জানাতে চান না।তখন তারা অন্য উৎস থেকে জানার চেস্টা করে।সেটা ভুল জানা হতে পারে। কারণ সে হয়তো তার বন্ধুর কাছে, ড্রাইভার, কাজের লোক কিংবা বয়সে বড় কোন বন্ধু বা কোন বই অথবা ইন্টারনেট থেকে জানার চেস্টা করবে।সেই জানাটা অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক নাও হতে পারে।তাই অন্য কোন উৎস থেকে তারা যেন না জানে, আপনিই জানান।এটা স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘটনা। অথবা এমনও হতে পারে কোন বন্ধু কিংবা বড় কোন আত্মীয়ের কাছ থেকে কৌতুক বশেই কিছু শুনতে পারে যেটা তাঁর ঐ বয়সে শোনার বা বুঝার বয়স না! কারণ সবার পারিবারিক পরিমন্ডল তো আর একনা!

একটা কথা মনে রাখবেন “ সন্তান বড় হলে তাদের প্রতি আরো বেশি আদর,ভালবাসা ও মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন হয়।তা না পেলে, আপনার সন্তানরা আদর ও মনোযোগ পেতে অন্য জায়গায় ছুটবে।বাসার চেয়ে বাইরে বেশি সময় কাটাবে। বন্ধুত্ব বাইরে হবে বাবা-মায়ের সাথে না। বাইরের বন্ধু প্রয়োজন কিন্তু সন্তানের ভাল বন্ধু ও ভরসাস্থল হবেন আপনি।তবেই তৈরী হবে সফল ও সুখী সম্পর্ক।



More Blog


কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি): ধারণা, কার্যপদ্ধতি ও মানসিক সুস্থতায় ভূমিকা
19-Mar-2025

কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি) মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এবং বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত পদ্ধতিগুলোর... read more

সিজোফ্রেনিয়া: লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও সিবিএসএসটি (গ্রুপ ট্রেনিং)
19-Mar-2025

সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia) একটি গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতা, যা একজন ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণকে প্রভাবিত... read more

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু প্রয়োজনীয় টিপসঃ
28-May-2022

আপন মনের ইচ্ছার বাইরে খারাপ কোন কিছু ঘটলে বা ঘটতে থাকলেই মূলত আমরা মানসিক অস্থিরতায় ভুগি। যে কেউ মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে পারে তাই... read more