কনভার্সন ডিজঅর্ডার এক ধরনের মানসিক সমস্যা। যেসব ব্যক্তি এই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয় তাদের মধ্যে নিউরোলজিক্যাল লক্ষণ দেখা যায় কিন্তু এই সমস্যা গুলোর পিছনে কোন ধরনের নিউরোলজিক্যাল কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না অর্থাৎ অর্গানিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। পূর্বে এই মানসিক রোগকে Hysteria বলা হত।
কনভার্সন ডিজঅর্ডার লক্ষণগুলো মূলত শারীরিক হয় অর্থাৎ শারীরিকভাবে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। সাধারণ কিছু লক্ষণগুলো হল চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া বা চোখে দেখতে না পাওয়া, সম্পূর্ণ প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা ফিট হয়ে যাওয়া অথবা শরীরের কোন নির্দিষ্ট অংশ যেমন হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া , কথা বলতে না পারা অনেক ক্ষেত্রে কানে শুনতে পায় না, স্পর্শ অনুভূতি থাকে না, ঢোক গিলতে সমস্যা হয় মনে হয় গলায় কিছু আটকে আছে হাঁটতে পারে না বা নিজের ব্যালেন্স রাখতে পারে না, হাত পা কাপাকাপি করে অথবা পুরো শরীর কাপাকাপি করে বা হাত পা বাঁকা হয়ে যায় বা মুখ বাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু এই শারীরিক লক্ষণ গুলো পিছনে কোন ধরনের শারীরিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। বেশিভাগ মানুষই মনে করে যে এই লক্ষণগুলো রোগী নিজেই ইচ্ছা করেই সৃষ্টি করছে। অনেকে আবার এই লক্ষণগুলোকে জিন পরীর আচর হিসেবে বিবেচনা করে যা সম্পূর্ণ ভুল। প্রকৃত অর্থে এই লক্ষণগুলো হঠাৎ করেই শুরু হয় এবং এই লক্ষণগুলো কখন হবে ব্যক্তি তা নিজেও বলতে পারে না লক্ষণ গুলো মূলত শুরু হয় কোন চাপ মূলক পরিস্থিতি আগে বা পরে অর্থাৎ একটি সাইকোলজিক্যাল দ্বন্দ্ব থেকে এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়। ব্যক্তি সম্পূর্ণ ভাবে অজ্ঞ থাকে কখন তার সমস্যা হবে বা তার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানেনা। DSM-5 অনুসারে কনভার্সন ডিজঅর্ডার কে ফাংশনাল নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার (Functional Neurological Symptom Disorder) এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কনভার্সন ডিজঅর্ডার এর লক্ষণ: লক্ষণ গুলো কে দুই ভাগে ভাগ করা
১. motor symptoms
২. sensory symptoms
১. Motor symptoms or deficits:
১. নিজের ব্যালেন্স রাখতে সমস্যা হয় বা পারে না (Impaired coordination or balance)
২. শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে বা সম্পূর্ণ বডি বা শরীরের কিছু অংশ প্যারালাইস হয়ে যায় (Weakness/paralysis of a limb or the entire body).
৩. কথা বলতে পারে না আস্তে আস্তে কথা বলবে (Impairment or loss of speech বা hysterical aphonia)
৪. ঢোক গিলতে সমস্যা হয় মনে হয় গলায় কিছু আটকে আছে দলার মত (Difficulty swallowing (dysphagia) or a sensation of a lump in the throat).
৫.Urinary retention
৬.Psychogenic non-epileptic seizures or convulsions
৭. শরীরের মাংস পেশী সংকুচিত হয়ে যায়(Persistent dystonia)
৮. শরীর কাপাকাপি করে (Tremor, myoclonus or other movement disorders)
৯. হাঁটতে সমস্যা হয়(Gait problems /astasia-abasia)
১০. অজ্ঞান হয়ে যায় বা ফিট হয়ে যায় (Loss of consciousness /fainting)
11. শরীরে বা মাথায় ব্যথা হয়।
২. Sensory symptoms or deficits:
১.চোখে দেখতে সমস্যা হয় বা কখনো কখনো একটা জিনিস দুইটা দুইটা দেখে বা অস্পষ্ট বা আবছা আবছা দেখে বা অনেক সময় দেখতে পায় না(Impaired vision (hysterical blindness), double vision)
২. কানে শুনতে সমস্যা হয় বা কানে শুনতে পায় না/ কানের মধ্যে শব্দ হয়(Impaired hearing /deafness).
৩. স্পর্শ অনুভূতি হয় না/ তাকে স্পর্শ করলে সে সাড়া দেয় না অথবা ব্যথা দিলেও সাড়া দেয় না (Loss or disturbance of touch or pain sensation).
এছাড়াও ব্যক্তির মধ্যে ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায় যেমন তার সাথে কি ঘটেছিলো।
মজার বিষয় হলো ব্যক্তির মধ্যে এই লক্ষণ গুলো কতটুকু প্রকাশ পাবে তা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির মেডিকেল বিজ্ঞানের নলেজ এর উপর অর্থাৎ ব্যক্তিদের anatomy knowledge এর understanding উপর। উদাহরণস্বরূপ যদি কোন ব্যক্তি দেখে/শুনে যে অন্য কোন ব্যক্তি প্যারালাইসিস হয়ে তার দুই পা অবশ হয়ে গেছে তাহলে সেই ব্যক্তি যদি কনভার্সন ডিজঅর্ডার হয় তাহলে ঠিক তার দুই পায়ে প্যারালাইসিস হয়ে অবশ হয়ে যাবে অর্থাৎ ব্যক্তির এই দুই পায়ের মধ্যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পাবে অন্য কোন অংশে প্রকাশ পাবে না।আরো বলা যায় যদি কোন ব্যক্তি দেখে/শুনে যে কেউ বা কারো মুখ বাঁকা হয়ে গেছে ,হাত পা বাঁকা হয়ে গেছে অথবা কথা বলতে পারছে না অথবা অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে যদি সেই ব্যক্তির যদি কনভার্সন ডিজঅর্ডার দেখা দেয় তাহলে ঠিক তার মধ্যে এই একই অংশে একই ধরনের লক্ষণগুলো দেখা দিবে অন্য কোন অংশে বা অন্য কোন তেমন লক্ষণ দেখা দিবে না।তবে এ সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত গবেষণা করা প্রয়োজন ।
কনভার্সন ডিজঅর্ডার এর কারণ:
কনভার্সন ডিজঅর্ডার নির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। যদিও কনভার্সন ডিজঅর্ডার লক্ষণগুলো নিউরোলজিক্যাল অর্থাৎ যে লক্ষণগুলো দেখা যায় সেগুলো Brain সাথে সম্পর্কিত কিন্তু তারপরেও Brain র কোন ধরনের সমস্যা হয় না। মেডিকেল বিজ্ঞানে এই রোগে কোন নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না বা এই রোগকে ব্যাখ্যা করতে পারে না বা কি কারণে এই রোগ হয় তা বলতে পারে না।
তবে মনোবিজ্ঞান এই রোগের ব্যাখ্যা করতে পারে।সাইকোলজিস্টদের মতে কনভার্সন ডিজঅর্ডার এর লক্ষণ গুলো সাধারণত একটি সাইকোলজিক্যাল দ্বন্দ্ব বা মানসিক চাপ (Psychological Conflict/stress) লাগা থেকে হয়ে থাকে। অর্থাৎ ব্যক্তি যখন এই সাইকোলজিক্যাল দ্বন্দ্ব সমাধান করতে পারে না তখন তার মধ্যে এই সমস্যাগুলো দেখা যায়। অর্থাৎ এই লক্ষণগুলোর মাধ্যমে ব্যক্তি সেই কঠিন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে রক্ষা করে অর্থাৎ ওই পরিস্থিতি তাকে আর মোকাবেলা করতে হয় না।
সাধারণত লক্ষণগুলো শুরু হয় একটি stressful experience এরপর থেকে। যেমন-
১. Suddenly before/after a stressful event.
২. Emotional or physical trauma.
৩. Stressor: যেমন পরীক্ষা নিয়ে টেনশন, Marital conflict, Relationship problem, highly stressful job, etc.
4. Psychological conflict: সাইকোলজিক্যাল দ্বন্দ্ব গুলো মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে যেমন-approach- approach conflict, approach-avoidance conflict, avoidance -avoidance conflict.
5.Sexual Abuse.
6. Psychological Trauma.
7. Neglect Behavior
চিকিৎসা:
১. কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি
২. Explorative Psychotherapy