গবেষণার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে মানসিক রোগের পিছনে শুধুমাত্র জিনকে দায়ী করা যায় না। এর সঙ্গে আরও অনেক কারণ যুক্ত থাকে। প্রকৃতপক্ষে জিনের প্রভাব এবং পরিবেশগত উপাদানের সংমিশ্রণই মানসিক অসুস্থতার জন্য দায়ী হয়।
গবেষকরা বলেন, তিনটি বিষয় মানসিক রোগের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
ক.বংশগত
খ.মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তন
গ.পরিবেশ এবং সামাজিক প্রভাব।
ব্রেইন ইমাজিং এবং টমোগ্রাফি পরীক্ষা করে রাসায়নিক পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর উপর ভিত্তি করেই মানসিক রোগের মেডিসিন প্রয়োগ করা হয়।
অতি সাম্প্রতিক সময়ে জিন থেরাপি বিবেচনা করা হচ্ছে। বংশগতির বাহন হলো এই জিন। যাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।
মানসিক রোগের কারণ হিসেবে বলা হয় জ্বিন, ভূত, ডাইনির আছড়, যাদুটোনা, পাপের ফল, আর কত অদ্ভুত সব কেচ্ছা কাহিনী। এতে করে রোগীর ভোগান্তি বাড়ে আর রোগটিও জটিলতর হয়ে ওঠে। অবশেষে রোগীর স্বজনরাও হতাশায় ভুগতে থাকে। দিশেহারা সর্বশান্ত হয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন।
মেডিসিনের পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট যেমন কাউন্সিলিং,সাইকোথেরাপি, বিহেভিয়ার থেরাপি নিলে রোগের জটিলতা কমে আসে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের রিলাক্সেশন থেরাপি যেমন ব্রেথিং এক্সারসাইজ, প্রগ্রেসিভ মাসকুলার রিলাক্সেশন, ইয়োগা, মেডিটেশন, নিয়মিত এক্সারসাইজ, পুস্টিকর খাদ্য গ্রহণ রোগীদের অনেকাংশে সুস্থ্য রাখে।
তবে আশার কথা এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। মন খারাপ হলেও কাউন্সেলিংয়ের জন্যে প্রফেশনালদের কাছে আসতে শুরু করেছে।
মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে কষ্টে থাকার পাশাপাশি তার পরিবারও তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ও কষ্টে থাকে। রাগ জিদ করা, তুচ্ছ ঘটনাকে জটিল করে দেখা, সন্দেহ করা ইত্যাদির কারণে প্রায়ই কাছের মানুষের সঙ্গে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
মানসিক রোগ হলে ব্যক্তির লেখাপড়া ও পেশাগত কাজ করতে অসুবিধা হয়। যার কারণে ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়। ব্যক্তি নিজেই শুধু আর্থিকভাবে দুর্দশার মধ্যে পড়ে না বরং তাঁর পরিবার এমনকি দেশের জিডিপির ওপর তার একটি প্রভাব পড়ে।
একটি নাগরিককে তৈরি করতে রাষ্ট্রকে অনেক অর্থ খরচ করতে হয়। সেই নাগরিকের কাছে রাষ্ট্রের প্রত্যাশাও থাকে। কিন্তু মানসিক রোগের কারণে তা না করতে পারলে কিংবা সে আত্মহত্যা করলে ব্যক্তি নিজে, তাঁর পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই মানসিক রোগকে অবহেলা না করে, লুকিয়ে না রেখে, তথাকথিত লোকলজ্জার ভয় কাটিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
যদি আমরা আর নিজেদের প্রতি সচেতন হই, পরিবারের প্রতি নজর দেই আর শিশুদেরকে নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক, স্নেহময়, স্বাবলম্বী, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিতে পারি তাহলেই মানসিক রোগ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।