মানসিক রোগী বললেই সাধারণত রাস্তার পাশের উশকো-খুশকো চুলের ছেঁড়া কাপড় পরা কিছু মানুষের চেহারা চিন্তায় আসে। অথবা চোখের সামনে মানসিক হাসপাতালের চিল্লাচিল্লি করা বা হাসাহাসি করা লোকদের চেহারা ভেসে উঠে। শুধুমাত্র এরাই কি মানসিক রোগী? না। প্রকৃত বাস্তবতা একটু ভিন্ন কথা বলে। এ কারনে প্রকৃত অর্থে কারা মানসিক রোগী তা জানা উচিত।
মাথা থাকলে যেমন মাথাব্যথা হবেই, তেমনি মন থাকলে মানসিক সমস্যাও হবেই। এক সমীক্ষায় বলে, আমেরিকায় প্রায় ৫৪ মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন প্রকার মানসিক সমস্যায় ভুগছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দেশেও দিনকে দিন মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। কিন্তু যে হারে বাড়ছে মানসিক রোগী, সে হারে নেই সচেতনতা। কাউকে মানসিক সাহায্য নিতে বললে প্রথমেই যে প্রতিবাদটি আসে তা হলো, “আমি কি পাগল?” এই কথাটি একই সাথে মানসিক রোগ বিষয়ে অজ্ঞতা ও অসহনশীলতার পরিচায়ক।
মানসিক অসুস্থতার মানেই ‘পাগলামি’ না। আমাদের চারপাশে এমন অগণিত মানসিক রোগী ঘুরে বেড়াচ্ছে যারা বাইরে যথেষ্ট সুস্থ, স্বাভাবিক, যারা আপনার সাথে এক টেবিলে বসে চা পান করবে, রাজনীতি বা সমাজব্যবস্থা নিয়ে সুগভীর আলোচনা করবে, আপনি ঘুণাক্ষরেও টের পাবেন না তার ভেতরের অস্থিরতার। বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে অকস্মাৎ এদের অসুস্থ সত্ত্বাটি বাইরে বেরিয়ে আসে। অনেক সময় অসুস্থতার শিকার এই ব্যক্তিরা পারস্পরিক ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কগুলো নষ্টের পেছনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এতে তাদের দোষ দেয়া যায় না। তারা নেহাৎ অসুস্থ, শারীরিক অসুস্থদের মতো তাদেরও প্রয়োজন স্বাস্থ্যগত সাহায্য।
মানসিক রোগ কি?
মানসিক রোগ হলো মস্তিষ্কের এক ধরনের রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক রোগ হচ্ছে একজন ব্যক্তির সুস্থভাবে চিন্তা করতে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সঠিকভাবে আচরণ করতে না পারা। মানসিক রোগ দুই ধরনের হতে পারে:
১. মৃদু ধরনের মানসিক রোগ:
এক্ষেত্রে জীবনের স্বাভাবিক অনুভূতিগুলো (দুঃখবোধ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি) প্রকট আকার ধারণ করে৷ এ ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হচ্ছে: অহেতুক মানসিক অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা-ভয়ভীতি, মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, বুক ধরফর করা, একই চিন্তা বা কাজ বারবার করা (শুচিবাই), মানসিক অবসাদ, বিষন্নতা, অশান্তি, বিরক্তি, অসহায়বোধ, কাজে মন না বসা, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, আত্মহত্যার করার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি৷
২. তীব্র ধরনের মানসিক রোগ:
এক্ষেত্রে আচার আচরণ কথাবার্তা স্পষ্টভাবে অস্বাভাবিক হয় ফলে আশেপাশের মানুষরা এটা বুঝতে পারে। এসময় যেসব লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হচ্ছে: অহেতুক মারামারি, ভাঙচুর করা, গভীর রাতে বাড়ির বাইরে চলে যাওয়া, আবোল-তাবোল বলা, সন্দেহ প্রবণতা, একা একা হাসা ও কথা বলা, নিজেকে বড় মনে করা, বেশি বেশি খরচ করা, স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি লোপ পাওয়া, ঠিকমতো ঘুম না হওয়া, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো না করা।
মানসিক রোগ থেকে বেঁচে থাকার উপায়:
আমরা যাদেরকে মানসিক রোগী ভাবি তারা ছাড়াও আরো অনেকে মানসিক রোগে আক্রান্ত। মানসিক রোগ থেকে বাঁচার জন্য প্রথমে প্রয়োজন দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি এবং ভালোভাবে বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছা। নিম্নলিখিত কিছু পরামর্শ মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কার্যকরী হতে পারে-
১। দক্ষ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করানো।
২। ভারসাম্যপূর্ণ ও স্থায়ী দৈনন্দিন তালিকা মেনে চলুন।
৩। কাজে ব্যস্ত থাকুন।
৪। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান।
৫। বিশ্রাম ও আরাম করার জন্য সময় নিন ।
৬। পুষ্টিকর এবং সুষম খাবার গ্রহণ করুন ।
৭। ধূমপান ও মদ্যপান সহ যাবতীয় নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন।
৮। নিজেকে সবার থেকে আলাদা করা থেকে বিরত থাকুন ।
৯। ধর্মীয় কাজে সময় দিন ।
১০। পর্নোগ্রাফি দেখা পরিহার করুন ।
"এসো নিজে করি" তে আপনার সেবা নিশ্চিত করুন। নিজে সচেতন হোন এবং অন্য দের কেউ সহায়তা করুন।
Call +8801304037003 for appointment.