কথা বলার সময় প্রশ্ন করা খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। আমরা প্রশ্ন করি কেবল তথ্য পেতে নয় বরং সমর্থন পাবার জন্য, অন্য ব্যক্তি কী চায় তা জানতে, আলোচনার জন্য এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।
তবুও, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা অনেক ক্ষেত্রে ভুল বুঝাবুঝি এবং হতাশার কারণ হতে পারে। প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তবে যে ব্যক্তিকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তিনি প্রশ্নটিকে তার যোগ্যতা, জ্ঞান বা সততার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসাবে বিবেচনা বা মনে করতে পারেন। যেহেতু আমরা আশা করি কথোপকথনটি আমাদের নিজস্ব অধীনে চলবে, তাই অনেক বেশি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা, বা ভুল ধরা, তার সম্পর্কে বিশ্বাস বা আত্মবিশ্বাসের অভাব এই বার্তা দিতে পারে । ঠিক তেমনি স্বামী-স্ত্রী বা দম্পতি একে অপরকে কোন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন, প্রথমে তারা একটু ঝাঁকুনি বা অস্বস্তি অনুভব করা শুরু করেন, এই ভেবে যে তার সত্যতাটিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন এবং তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করছেন বা তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ করছেন। কিছু দম্পতি/ লোক আছে যারা প্রশ্নকে হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে। তারা জিজ্ঞাসাবাদকে এক ধরণের সন্দেহ হিসাবে বিবেচনা করে এবং প্রতি রোধ করার জন্য কাজ করে/চেষ্টা করে। প্রকৃতপক্ষে, কিছু দম্পতি তাদের প্রয়োজনের চেয়ে আরও গভীরভাবে তদন্ত বা প্রশ্ন করে থাকে কারণ এটি তাদের নিজস্ব আবেগিয়/সংবেদনশীল চাহিদা পূরণ করে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন মহিলা আমাকে বলেছিলেন, "আমি মানুষের মনের ভিতরে ডুকতে চায় এবং তারা কীভাবে চিন্তা করছে তা দেখতে পছন্দ করি এবং আমি তাদের সম্পর্কে সমস্ত কিছু বুঝতে চাই"। কিন্তু যখন তিনি স্বামীর সাথে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করেছিলেন, তিনি তাকে বার বার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন এবং তিনি লক্ষ্য করছিলেন তার স্বামী তাতে বিরক্ত হচ্ছিলেন।।
কথোপকথন একজন ব্যক্তি বিরক্তি হতে পারে যখন তাকে প্রশ্নগুলো পরোক্ষ ভাবে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, দম্পতি কোন একজন যদি একটি ভাল কাজ করে বা এমন কোন ঘটনা ঘটায় বা কথায় গেলে আরেকজন যদি প্রশ্ন করে বলে “ তুমি কেনএইটা করেছ? বা এইটা কে করেছে? বা কেন গিয়েছিলে?”। তখন আরেক জন মনে করে “সে প্রায়শই তাকে নিচু দেখানোর চেষ্টা করে এবং প্রতিক্রিয়া করে, "তুমি আমাকে সর্বদা কেন পরীক্ষা করে দেখে? তুমি আমাকে সর্বদা সন্দেহের নজর দিয়ে দেখ বা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা কর”।
এই ভাবে প্রশ্ন করাকে অনেকে অভিযোগ হিসেবে বিবেচনা করেন এবং কষ্ট পায়। কারণ এই ধরনের প্রশ্ন দম্পতির সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে। দম্পতি মনে করে তাকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বা তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। কিছু প্রশ্নের ধরন আছে যেগুলি করা হলে দাম্পতে একটি বিশেষ ধরণের সমস্যা তৈরি হতে পারে: এই ধরণের প্রশ্ন অন্য ব্যক্তিকে রক্ষণাত্মক করে তুলতে পারে। যদিও প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন হয়ত তিনি আন্তরিকভাবে তথ্য অনুসন্ধান করতে চাইছেন। তাই প্রশ্ন কি ভাবে করছেন সেটার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রশ্ন করার সময় যদি “কেন/why”, শব্দ ব্যবহার করেন তবে তা প্রশ্নের শুরুতেই সঙ্গী মনে করতে পারেন তাকে নিন্দনীয় প্রশ্ন জিজ্ঞাসাকরা হয়েছে। যেমন- "আপনি এত দেরি করে কেন ঘরে এসেছিলেন?" বা "আপনি এখনও টেলিভিশন কেন দেখছেন?" । আর কেন প্রশ্নগুলি মাঝে মাঝে অবিশ্বাস বা সন্দেহকে বোঝায়। যদিও ব্যক্তি স্বাভাবিক ভাবে কারণ জানতে চেয়েছিলেন।কিন্তু এটাকে আরেকজন ভুল ভাবে ব্যাখা করে। সুতারং “কেন/why”, শব্দের পরিবর্তে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার আর যে উপায় রয়েছে তার মাধ্যমে করতে হবে। এখানে দুটি উদাহরণদেওয়া হল: “কেন/why”, শব্দ ব্যবহার না করে।
"আপনি কি নতুন শাড়ি বা জামা কেনার বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্তটি আমাকে ব্যাখ্যা করতে পারেন?"
"রাস্তায় কি কিছু সমস্যা হয়েছিল, বাসায় আসতে দেরি হল?
স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ বা ব্যবহারের পার্থক্য দেখা যায় এই পার্থক্যের কারণ তাদের মধ্যে অনেক সময় দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তাহলে প্রশ্ন হল দম্পতির প্রশ্ন করার ধরণ তাদের মধ্যে কি ভাবে আসল। তাহলে আমাদের ফিরে যেতে হবে তাদের বিয়ে বা সম্পর্কের আগের জীবনে অথ্যাৎ তাদের কিভাবে লালনপালন করা হয়েছে। অথ্যাৎ তাদের পারিবাহিক কথাবার্তার ধরন কেমন ছিল, পিতামাতার দুজনের কথা বলার ধরন কেমন ছিল, পিতামাতা তাদের সাথে কি ভাবে কথা বলেছিলেন, তাদের কি ভাবে প্রশ্ন করেছিলেন সেটা কি কেন শব্দ দ্বারা নাকি ব্যাখা জানতে চাওয়া ইত্যাদি। পরিবারগুলিতে, কোন কিছুর ব্যাখ্যা খুব কমই জিজ্ঞাসা করা হয় বা উত্তরের জন্য কম উতসাহ দেওয়া হয় অথাৎ উত্তর দেওয়ার অভ্যস্ত নয়।
যে ব্যক্তি “কেন” শব্দ যুক্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হন নি, তবে এই জাতীয় ব্যক্তি তার স্ত্রীর বা স্বামীর প্রশ্নের প্রশ্নকে একটি চ্যালেঞ্জ বা গোপনীয়তার আক্রমণ হিসাবে বিবেচনা করতে পারে। খুব অল্প প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার ক্ষেত্রেও বিপদ রয়েছে। যেসব স্বামীরা বা স্ত্রীরা কখনও প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন না তারা সম্ভবত মনে করে সঙ্গী যা বলছে তা সব সঠিক কিন্তু অনেক সময় তা ভুলও হতে পারে। আবার অনেক স্বামীরা বা স্ত্রীরা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা না করলে তারা মনে করে সে আমার প্রতি উদাসীন বা আমার কথার কেয়ার করে না বা আমাকে মনোযোগ বা গুরুত্ব দেয় না ইত্যাদি।
সুতারাং দাম্পত্য জীবনে কথোপকথনে প্রশ্নের ব্যবহার অন্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একে অপরের প্রশ্ন করার ধরণ সম্পর্কে জানতে হবে। অনেক দম্পতি বিশ্বাস করে যে তাদের নিজস্ব একটি প্রাকৃতিক স্টাইলটি আছে, তারা এটি "অপসারণ/পরিবর্তন" করতে পারবে না সম্ভব না। কিন্তু বাস্তবতা হল বা মনোবিজ্ঞানীদের মতে মানুষের আচরণর, বচনভঙ্গী, কথা বলার ধরন, চিন্তার ধরন, আবেগের ধরন প্রাকৃতিক স্টাইল হলেও সেটা পরিবর্তন করত যায়। তাই বদ্ধমূল ধারনায় আটকে না থেকে নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। নিজে না পারলে মনোবিজ্ঞানীদের সহায়তা নিন। দাম্পত কলহ দূর করার জন্য একজন ভাল চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী/ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট/কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট/মনোবিজ্ঞানীর সাহতে দেখা করুন। নিজের দাম্পত্য জীবন সুন্দর ভাবে উপভোগ করুন।