Call Us: +88 01304-037003

বিয়ের এক বছরের মধ্যে বিচ্ছেদ হওয়ার যেসব কারণ:

বিয়ের এক বছরের মধ্যে বিচ্ছেদ হওয়ার যেসব কারণ:

13-Mar-2022

বিয়ের আগে প্রত্যেক নারী-পুরুষের কিছু নিজস্ব বিষয় থাকে। তা সেটা প্রেমের বিয়েই হোক বা পারিবারিকভাবে বিয়েই হোক। জীবনে তাঁদের ভূমিকার পরিবর্তন হয়। এই ভূমিকা পরিবর্তনের বিষয়টি দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিতে হয়। এই সময় আরেকজনের সঙ্গে ও আরেকটি পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলার সমস্যা হয়। তখন ধৈর্যের অভাব, ব্যক্তিত্বের সংঘাত আর আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে।
বিয়ের এক বছরের মধ্যে বিচ্ছেদ হওয়ার যেসব কারণ গবেষণায় উঠে এসেছে—
বিশ্বাস-অবিশ্বাস ও প্রতারণা: বিয়ের পরপরই যদি যেকোনো একজনের অবিশ্বস্ততা আর প্রতারণার বিষয় প্রকাশ পায়। ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে প্রতারণা, পেশা নিয়ে প্রতারণা ইত্যাদি হতে পারে। বিয়ের আগের পুরোনো সম্পর্ক আবার নতুন করে তৈরি হওয়া, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, বিবাহ–বহির্ভূত সম্পর্ক অনেক সময় বিচ্ছেদের কারণ হয়ে যায়।
যৌন সমস্যা: বিয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য বিষয় যৌনতা। বিয়ের পরপরই যদি দেখা যায়, একজনের মধ্যে গুরুতর যৌন সমস্যা বা কোনো বিকৃতি (পারভার্সন) আছে, তখন দ্রুত বিচ্ছেদ ঘটে।
মাদক সমস্যা: বিয়ের পরপর যদি আবিষ্কার হয় কেউ মাদকাসক্ত, তখন মাদকাসক্তির কারণে তাঁর আচরণের পরিবর্তন হয়, যৌন সমস্যা বাড়ে, আর্থিক অসচ্ছলতা দেখা দেয়—যা দ্রুত বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ। মাদকের পাশাপাশি প্রযুক্তি–আসিক্ত এবং প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সূত্র ধরে সম্পর্কের জটিলতা হতে পারে।
‘এ তো তুমি নও’: বিয়ের আগে যাঁকে চিনতেন, বিয়ের পরে তাঁকে যেভাবে পেতে চেয়েছিলেন, দেখা গেল তিনি তেমনটা নন। অর্থাৎ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বাস্তবতার মিল না থাকায় একটা ধাক্কা খেতে হয়। সেখান থেকে বিচ্ছেদের সূত্রপাত হয়।
‘আমাকে বোঝে না’: ও আমাকে বুঝতে চায় না। আমার আবেগকে মূল্য দেয় না—এ ধরনের অভিযোগ পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ককে নষ্ট করে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব বিচ্ছেদকে ত্বরান্বিত করে। যোগাযোগের ঘাটতিতে অনেক সময় এ রকম মনে হয় যে আরেকজন আমাকে বোঝে না।
বেকারত্ব: বিয়ের পরপর বেকার হয়ে যাওয়া, অর্থনৈতিক চাপ বেড়ে যাওয়া এবং আর্থিক সংকট ও ঋণ দুজনের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি করে এবং বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে দেখা দেয়।
তৃতীয় পক্ষের যুক্ত হওয়া: অনেক সময় দেখা যায়, দুজনের সম্পর্কের মধ্যে পরিবারের অন্য কোনো সদস্য নাক গলিয়ে অযথা জটিলতা তৈরি করছে। এই তৃতীয় পক্ষ হয়তো ভালো করতে গিয়ে প্রকারান্তরে খারাপ করে ফেলছে। তিনি হয়তো ভালো মনে করে কিছু পদক্ষেপ নিলেন, কিন্তু তা ভালো না হয়ে খারাপ হয়ে যায়।
দূরে থাকা: বিয়ের পর দুজনে একসঙ্গে না থেকে দূরে দূরে থাকলে সম্পর্কের গভীরতা তৈরি হয় না। তখন সামান্য ঘটনায় ডিভোর্স হয়ে যায়।
কী করণীয়:
বিয়ের পর দুজনের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়াটা খুবই দরকার—এমনকি যদি আগে থেকেও বহুদিনের চেনাজানা ও প্রেম থেকেও থাকে। কারণ, বিয়ে হচ্ছে একটি পরিবর্তনের সন্ধি। বিয়ের মাধ্যমে প্রত্যেকের মনোজগতে পরিবর্তন ঘটে। আগে যে ভূমিকায় কখনো ছিলেন না, সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। এ সময় একটি মানসিক চাপ তৈরি হয়। হোমস ও রাহে ১৯৬৭ সালে তাঁদের বিখ্যাত স্ট্রেস স্কেলের প্রচলন করেন। সেখানে ৪৩টি লাইফ ইভেন্টের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেগুলো আমাদের মধ্যে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস তৈরি করে। সেখানে সঙ্গী/সঙ্গিনীর মৃত্যুকে ১ নম্বর মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী ঘটনা বলা হয়েছে, ২ নম্বরে আছে ডিভোর্স। আর জেনে আশ্চর্য হবেন যে ৪৩টি বিষয়ের মধ্যে ৭ নম্বরে আছে বিয়ে! এর অর্থ, বিয়ে পছন্দের মানুষের সঙ্গে হোক বা অপছন্দের জনের সঙ্গে, এটি মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী একটি বিষয়। তাই বিয়ের পর মানসিক চাপে থাকা প্রত্যেক নারী–পুরুষই খানিকটা অধৈর্য হয়ে থাকেন। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তখন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করে ফেলেন, যা কোনো কোনো সময় ডিভোর্সে পর্যবসিত হয়। ডিভোর্স এড়াতে সুখী জীবনযাপনের জন্য যা করা যেতে পারে—
ধৈর্য ধরতে হবে: পরস্পরকে দোষারোপ না করে ধৈর্য ধরে একে অপরকে বুঝতে হবে। তড়িঘড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
যৌন সমস্যার চিকিৎসা: পুরুষ বা নারী, উভয়ের যে কারও যৌন সমস্যা থাকতে পারে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো দুর্বলতা বা অসুবিধা থাকলে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত শারীরিক মেলামেশা সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সহায়ক।
তৃতীয় পক্ষকে সুযোগ দেওয়া যাবে না: নিজেদের সমস্যা সমাধানে অপরকে হস্তক্ষেপের সুযোগ দেওয়া যাবে না। নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে।
কার্যকরী যোগাযোগ: দুজনের মধ্যে কার্যকরী যোগাযোগ তৈরি করতে হবে। নিজেদের না বলা কথাটুকু বুঝে নিতে হবে। যোগাযোগের ঘাটতি ভুল–বোঝাবুঝি বাড়াবে ও ডিভোর্সের দিকে ঠেলে দেবে।
জবাবদিহি ও খোলামেলা: গোপনীয়তা সন্দেহের একটি কারণ। প্রত্যেকের নিজস্বতা থাকবে। কিন্তু স্পর্শকাতর বিষয়গুলো গোপন করতে থাকলে অবিশ্বাস বাড়বে। বিচ্ছেদের ঝুঁকিও বাড়বে।
আগেই সন্তান নয়: পরস্পরের মধ্যে বিবাদ, ভুল–বোঝাবুঝি দেখা দিলে পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় সন্তান নেওয়ার পরামর্শ দেন, যা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক ও ভুল। সম্পর্ক মজবুত না করে সন্তান নেওয়া ঠিক নয়। এতে জটিলতা আরও বাড়ে।
আর্থিক ব্যবস্থাপনা: বিয়ের পর খরচের গতিপ্রকৃতির পরিবর্তন হয়। এ সময় সুশৃঙ্খলভাবে আর্থিক ব্যবস্থাপনা আর পরিকল্পনা করা দরকার, না হলে মানসিক চাপ আরও বাড়ে।
কাজগুলো ভাগ করে নেওয়া: ঘরের আর বাইরের কাজগুলো করার সময় পরস্পরের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ‘এটি আমার কাজ’, ‘এটি তোমার কাজ’, ‘আমি এটি কেন করব’ ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।
রাগ নিয়ন্ত্রণ ও মনের যত্ন: মনের যত্ন নিতে হবে, নিজেকে সময় দিতে হবে। রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো রপ্ত করতে হবে। মনের জন্য ক্ষতিকর কাজ—মাদকাসক্তি, রাতজাগা ও প্রযুক্তিতে অতি আসক্তি এড়িয়ে চলতে হবে। পরস্পরকে গুণগত সময় দিতে হবে।
প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ: সম্পর্ক নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হলে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুন "এসো নিজে করি"; তে ।



More Blog


কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি): ধারণা, কার্যপদ্ধতি ও মানসিক সুস্থতায় ভূমিকা
19-Mar-2025

কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি) মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এবং বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত পদ্ধতিগুলোর... read more

সিজোফ্রেনিয়া: লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও সিবিএসএসটি (গ্রুপ ট্রেনিং)
19-Mar-2025

সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia) একটি গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতা, যা একজন ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণকে প্রভাবিত... read more

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু প্রয়োজনীয় টিপসঃ
28-May-2022

আপন মনের ইচ্ছার বাইরে খারাপ কোন কিছু ঘটলে বা ঘটতে থাকলেই মূলত আমরা মানসিক অস্থিরতায় ভুগি। যে কেউ মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে পারে তাই... read more