ভেঙে যাওয়া পরিবারের সন্তানদের নিয়ে গবেষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন।
গবেষণায় তারা দেখেছেন এইসব পরিবারের ছেলেমেয়েদের সামাজিকীকরণ ব্যাহত হয়। তারা সবসময় একধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। এই শিশুদের ক্ষেত্রে প্রথমেই যেটা দেখা যায় তারা স্কুলে যায় না। ফলে শিশু অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
তারা মনে করেন ‘ব্রকেন ফ্যামিলির ছেলে-মেয়ে’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে সমাজ তাদেরকে একদম আলাদা করে রেখেছে। সমাজে সহজ ভাবে নেয়া হয় না তাদের।
এর ওপর তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ বা সামাজিকীকরণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ফলে সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার জন্য যে ধরনের পরিবেশের মধ্যে থাকা দরকার তা থেকে তারা বঞ্চিত হচেছ।
অনেক ক্ষেত্রেই তারা মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে। অভিভবকত্ব নিয়ে সঙ্কট, টানাপড়েন।
পারিবারিক নির্যাতন, বিবাহ-বিচ্ছেদ সহ বিভিন্ন বিষয়ে আইনি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র।
সেখানে বিচ্ছেদের জন্য শালিসী বৈঠকে আসা স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে সন্তানদের অভিভবকত্ব নিয়ে সঙ্কট দেখা যায়।
সংগঠনটির আইনজীবী নীনা গোস্বামী জানান, “সন্তান কার কাছে থাকবে এটা নিয়ে অনেকসময়ই অভিভাবকদের মধ্যে লড়াই দেখা যায় কিন্তু বাচ্চাটি কোথায় থাকলে তার জন্য মঙ্গলজনক হবে সে বিষয়ে হয়তো তারা ভাবছেনই না। আদালতের শরণাপন্ন হলে হয়তো আদালত তার বিবেচনাপ্রসূত একটি রায় দেয় কিন্তু এর আগ পর্যন্ত যে টানাপড়েন চলে তাতে ওই ছেলেটি কিংবা মেয়েটির ওপর অনেক নেতিবাচক পড়ে। তাদের আচরণগত অসামঞ্জস্য দেখা যায়, পড়শোনায় মনোযোগ হারায়।
আইনজীবী নীনা গোস্বামী আরও উল্লেখ করেন, অনেক ক্ষেত্রে অনেক মহিলা ছেলে-মেয়েরা ‘ব্রকেন ফ্যামিলির সন্তান’ বলে আখ্যা পাওয়ার ভয়ে দিনে পর দিন স্বামীর নির্যাতন সহ্য করেন।
অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বলেন, বর্তমান সময়ে এসে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়ছে বলে বিভিন্ন গবেষনায় পাওয়া তথ্যে তাদের মনে হয়েছে । তবে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না বলে তিনি জানান।
“সমাজের একটি বড় অংশের মধ্যে বিচ্ছেদের বা পরিবার ভাঙার ঘটনাগুলোর কোনও রেকর্ড থাকে না।
ফলে এইসব পরিবারের সন্তানদের সংখ্যা সম্পর্কেও সঠিক ধারনা পাওয়া যায় না। বিভিন্ন শ্রেণীতে এই হার বিভিন্ন রকম। উচ্চবিত্তদের মধ্যে যে বিচ্ছেদের ঘটনাগুলো ঘটে তার রেকর্ড থাকে।
অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেখানে দেখা যাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে বিচ্ছেদের যে ফাইলগুলো জমা পড়ছে সেখানে মেয়েরাই অধিক হারে আবেদন করছে। আর একেবারে নিম্মবিত্ত শ্রেণীতেও আমরা দেখেছি সেখানে ব্রকেন ফ্যামিলির সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু কোনও রেকর্ড থাকে না।
তারপরও বলা যায় গত দশবছরের পরিসংখ্যান থেকে প্রতীয়মান হয় সংসারের ভাঙনের এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছেই।