বডি ডিসমোরফিক ডিসঅর্ডার একটি মানসিক সমস্যা যার ফলে ব্যক্তি তার শারীরিক বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন মুখ, নাক, কান, দাঁত, নিতম্ব, স্তনের আকার, যৌনাঙ্গ, হাত, পা, পেট, চোখ, ব্রণ, দাগ, চুল পাতলা এবং টাক, পেশী আকার, কণ্ঠস্বর ইত্যাদি নিয়ে অনেক সময় ধরে চিন্তাভাবনা করে এবং তারা মনে করে বা বিশ্বাস করে তাদের এই সব অঙ্গের এক বা একাধিক ত্রুটি আছে বা দেখতে খারাপ বা সুন্দর না ।যার ফলে তারা মনে করে তাদের দেখতে ভাল দেখায় না বা কুসিত দেখায়। এই সব চিন্তাভাবনা ফলে তারা বিব্রত, লজ্জা এবং উদ্বেগ বোধ করে এবং ব্যক্তি সামাজিক পরিস্থিতি এড়িয়ে চলে। অনেক সময় দেখা যায় যে তারা তাদের শারীরিক এই সব অঙ্গগুলো রুমাল বা কাপড় বা অন্য কিছু দিয়ে ঢেকে রাখে। অনেক মিডিয়া সেলিব্রেটি নায়ক নায়িকার মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়।
কোন ব্যক্তির যদি বডি ডিসমোরফিক ডিসঅর্ডার থাকে তখন ব্যক্তি নিজের চেহারা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের উপর তীব্রভাবে মনোনিবেশ করে, বারবার আয়নায় পরীক্ষা করে, বারবার চেক করে নিজেকে আশ্বাস করতে চান ঠিক আছে কিনা। প্রতিদিন অনেক ঘন্টা এইসব পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করে যা ব্যক্তির প্রত্যাহিক জীবনযাত্রাকে ব্যহত করে এবং দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।যার ফলে ব্যক্তির মধ্যে দুচিন্তা, হতাশা, অস্বস্তি দেখা দেয়।
ব্যক্তি তার অঙ্গের ত্রুটি "সমাধান" করার চেষ্টা করে এবং এর জন্য ব্যক্তি অসংখ্য কসমেটিক পদ্ধতি অনুসন্ধান করে, বা বিভিন্ন প্লাস্টিক সার্জারি করে থাকে বা করার চেষ্টা করে। অনেকে নিজেকে সুন্দর ভাবে প্রকাশ করার জন্য বেশি মেকআপ করে , আবার অনেকে অনলাইন থেকে অনেক দামি দামি পোশাকের অর্ডার করে। মনে করে এই পোশাক পড়লে তাকে অনেক সুন্দর দেখাবে। এইটা ব্যক্তিকে সাময়িক ভাবে তার দুচিন্তা, হতাশা, অস্বস্তি কমিয়ে দেয় কিন্তু এর কিছু সময় বা কিছু দিন পরে, ব্যক্তির মধ্যে অসন্তুষ্টি, দুচিন্তা, হতাশা, অস্বস্তি অনুভব করে এবং প্রায়শই উদ্বেগ বা দুঃচিন্তাগ্রস্ত থাকে। আবার নিজেকে সুন্দর করার জন্য বিভিন্ন সমাধান খুজতে থাকে বা তা সমাধান করার জন্য অন্যান্য উপায়গুলি সন্ধান করতে শুরু করে।
বডি ডিসমোরফিক ডিসঅর্ডারের লক্ষণ:
1. অনেক বেশি চিন্তা করে বা ব্যস্ত থাকে শারীরিক অঙ্গ বা চেহারার ত্রুটি নিয়ে। যদিও শরীরে বা চেহারায় কোন ত্রুটি না থাকলেও বা থাকলে অন্ত্যান্ত নগণ্য।
২. দৃঢ় বিশ্বাস যে তার চেহারাতে কোনও ত্রুটি রয়েছে যা তাকে কুৎসিত বা বিকৃত করে তোলে।
৩. বিশ্বাস করে অন্যরা নেতিবাচক ভাবে তার চেহারা সম্পর্কে খেয়াল করে বা উপহাস করে।
৪. নিজেকে প্রতিরোধ করা বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বার বার/ঘন ঘন ত্রুটিগুলি সংশোধন বা আড়াল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন আচরণ বার বার করে থাকে যেমন- ঘন ঘন আয়না পরীক্ষা করা, নিজেকে বারবার সাজানো, প্লাস্টিক সার্জারি করা, ত্বক তোলা ইত্যাদি।
৫। ত্রুটিগুলি আড়াল করার চেষ্টা করা যেমন - স্টাইলিং, ভারী মেকআপ করা, ঢিলেঢালা পোশাক পড়া, রুমাল বা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা, চশমা পড়া, হাত দিয়ে ঢেকে রাখা ইত্যাদি।
৬। নিজের চেহারাটিকে অন্যের সাথে ক্রমাগত তুলনা করা।
৭। অন্যের কাছ থেকে নিজের চেহারা সম্পর্কে প্রায়শই আশ্বাস খুঁজে বা বারবার জিজ্ঞাসা করে।
৮। পারফেকশনিস্ট প্রবণতা থাকা।
৯। অল্প সন্তুষ্টির জন্য প্রসাধনী পদ্ধতিগুলি সন্ধান করে।
১০। সামাজিক পরিস্থিতি এড়িয়ে চলে।
ব্যক্তির অত্যধিক চিন্তাভাবনা এবং পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণগ ও অযাচিত চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পরে এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে, যে এগুলি ব্যক্তির সামাজিক জীবন, কাজ, স্কুল বা কার্যকারিতার অন্যান্য ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝামেলা বা সমস্যা সৃষ্টি করে।
কারণসমূহ :
নির্দিষ্ট করে বলা যায় না যে কী কারণে বডি ডিসমোরফিক ডিসঅর্ডার হয়। বডি ডিসমারফিক ডিসঅর্ডার সাধারণত কৈশরে শুরু হয় এবং এটি পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়কেই প্রভাবিত করে।
কিছু কারণগুলি শরীরের ডিসমোরিক ডিসঅর্ডার বিকাশ বা ট্রিগার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে বলে মনে হয়:
১।পারিবারিক ইতিহাসঃ রক্তের আত্মীয় বা পরিবারের মধ্যে বডি ডিসমোরফিক ডিসঅর্ডার বা শুচিবায়ু জনিত মানসিক সমস্যার কেউ থাকলে।
২।মস্তিষ্কে অস্বাভাবিকতাঃ মস্তিষ্কের হরমোন কোন কারণে বেড়ে বা কমে গেলে বা নিওরোট্রান্সমিটার জনিত সমস্যা হলে।
৩। শরীর সম্পর্কে নেতিবাচক অভিজ্ঞতাঃ নেতিবাচক জীবনের অভিজ্ঞতা যেমন শৈশব টিজিং, অবহেলা বা গালাগালি।
৪. বুলিং বা টিজিংয়ের অভিজ্ঞতা: কোন ব্যক্তি যদি তার শরীর বা শারীরিক বেশিষ্ট্য নিয়ে স্কুল, কলেজে বুলিংয়ের শিকার হয় তাহলে তার মধ্যে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫। মনোবৈজ্ঞানিক কারণঃ পারফেকশনিজমের মতো কিছু ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য, উদ্বেগ বা হতাশার
কারণে হতে পারে।
৬। সামাজিক কারণঃ সামাজিক চাপ বা সৌন্দর্যের প্রত্যাশা।
Treatment:
বডি ডিসমোরফিক ডিসঅর্ডার জন্য চিকিতৎসা দুই ধরনেরঃ
১।Cognitive Behavioral Therapy (জ্ঞানীয় আচরণ থেরাপি):
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট বা প্রেফেশলনাল সাইকোলজিস্টের কাছে থেকে নিতে হবে। বডি ডিসমোরফিক ডিসঅর্ডারের জন্য cognitive behavioral therapy আপনাকে সহায়তা করতে পারেঃ
১। কি ভাবে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা, সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া এবং আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে সময়ের সাথে কীভাবে সমস্যা থেকে বের হয়ে আসা যায় তা শিখতে আপনাকে সহায়তা করে।
২। আপনার দেহের সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করা এবং চিন্তাভাবনার আরও ইতিবাচক উপায়গুলি শিখতে।
৩। বারবার আয়না দেখা বা অনুসন্ধান কমাতে সহায়তা করার জন্য বিকল্প উপায়গুলি শেখা।
৪। আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য আপনাকে অন্যান্য আচরণের শিক্ষা দেওয়া, যেমন সামাজিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করা বা সামাজিক দক্ষতার প্রশিক্ষণ।
২। Medications: Psychiatrist বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কাছ থেকে মেডিসিন নিতে হবে।