বার্ধক্য একটি স্বাভাবিক জৈবিক ঘটনা এবং মন্থর ও আনুক্রমিক গতিতে এগিয়ে আসা দৈহিক অবক্ষয় যার ফলে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মক্ষমতা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর অবধারিত পরিণতি হচ্ছে মৃত্যু। সাধারণভাবে বার্ধক্য দ্বারা প্রায়ই বয়োবৃদ্ধির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। এটি অবশ্যম্ভাবী জৈবিক বাস্তবতা, এর একটা নিজস্ব গতি রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রতিরোধক আবিষ্কার সত্ত্বেও তা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
কত বয়স অতিক্রান্ত হলে একজন মানুষকে বৃদ্ধ বলে বিবেচনা করা হবে তার কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। উন্নত বিশ্বে বার্ধক্য বিবেচনার ক্ষেত্রে আনুক্রমিক বয়স বড় ভূমিকা পালন করে। কারও বয়স কর্ম থেকে অবসর গ্রহণের বয়সে পৌঁছালে অর্থাৎ ৬৫ বছর হলে তার বার্ধক্য শুরু হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু উন্নয়নশীল বিশ্বে বার্ধক্য নির্ণয়ে আনুক্রমিক বয়সের ভূমিকা ন্যূন। যখন কারও পক্ষে কর্মক্ষেত্রে আর কোন সক্রিয় অবদান রাখা সম্ভব হয় না তখনই এর সূচনা বলে ধরে নেওয়া হয়। তথাপি এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবসর গ্রহণের গড় বয়স, বিদ্যমান আইন, স্বাস্থ্যগত অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে ৬০ বছর বয়সকে বার্ধক্যের পরিসংখ্যানসম্মত বাস্তব সীমা বলে মনে করা যায়। বস্ত্তত ৬০ বছর বয়স থেকে সাধারণভাবে সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা বার্ধক্যের সূচনা বলে নির্ধারণ করেছে। অবশ্য, অঞ্চলভেদে গড় আয়ুর পার্থক্য রয়েছে এবং একজন মানুষের বার্ধক্যের প্রক্রিয়া শুরুতে আরও বহুকিছুর প্রভাব কাজ করে। কোন কোন মানুষ ৩৫ বছর বয়সেই বুড়ো হয়ে যায়, আবার অনেকে ৭০ বছর বয়সের পরও কর্মক্ষমভাবে বেঁচে থাকে।
বিখ্যাত ব্রিটিশ গায়ক তথা লেখক ডেভিড বাওয়ি একবার বলেছিলেন, মানুষের বয়স বেড়ে যাওয়াটা হল একটা অসাধারণ প্রক্রিয়া। যখন আপনি হয়ে ওঠেন সেই রকম ব্যক্তি, ঠিক যেমনটি আপনার হয়ে ওঠা উচিত ছিল। জীবনে পরিবর্তনই শাশ্বত, এটা মেনে নেওয়া সহজ। কিন্তু সেই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটা ততটাই কঠিন।
বাড়ির সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তিটি আজকাল একটু বেশিই খিটখিটে হয়ে গেছে। কথায় কথায় ভুল ধরছে। খাওয়াদাওয়াও ঠিকমতো করছে না, মাঝেমধ্যে সবার সঙ্গে কথাবার্তাও বন্ধ করে দিচ্ছে। কি সমস্যা জিজ্ঞেস করলেও খেপে যাচ্ছে। অন্য সদস্যদের সঙ্গে কিছুতেই বনিবনা হতে চাচ্ছে না। সবাই একটা কথাই ভাবছে, এতো শারীরিক সমস্যার মধ্যে আবার মানসিক কোনো অসুখ করলো নাতো?
বার্ধক্যে মানসিক রোগ খুব সাধারণ একটি বিষয়। এটা আমরা খেয়াল না করে অগ্রাহ্য করে যাই সাধারণত। কিন্তু এই সমস্যা নিয়েও মাথা ঘামানো দরকার।
বয়স বাড়লে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় নানা কারণে।
এই অতিমারি বয়স্কদের মধ্যে মানসিক বিড়ম্বনা, শূন্যতাবোধ ও দুঃখের অনুভূতিকে তীব্র করার অনুঘটক হিসাবে কাজ করছে। এইসব বয়স্কদের জীবনে বার্ধক্যজনিত সমস্যা তো থাকছেই। তার সঙ্গে মন ও শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো, নিঃসঙ্গতা, মৃত্যুভীতির মতো অনুভূতির মধ্যে দিয়ে তাঁদের প্রায়ই যেতে হচ্ছে।
বৃদ্ধ বয়সের যে-শারীরিক দুর্বলতা এবং স্বাধীন ভাবে চলাফেরার ক্ষমতা হারানো, এগুলোকেও তাঁরা রীতিমতো ভয় পেতে শুরু করেন। বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে তাঁদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে এই ধরনের অনুভূতির মধ্যে দিয়ে অনেককে যেতে হয়। এই রকম সব পরিস্থিতির মোকাবিলায় গুরুত্ব রয়েছে বৃদ্ধদের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শের। এর ফলে বয়স্ক প্রজন্ম বুঝতে পারবেন যে, জীবনের যাত্রাপথে তাঁরা মোটেই নিঃসঙ্গ নন।
থেরাপি ও উপযুক্ত চিকিৎসা:
কাউন্সেলিং হলো বৃদ্ধ বয়সের লাঠির মতো ভরসা। যাকে আঁকড়ে ধরে বয়স্করা তাঁদের জীবনের সোনালি দিনগুলো আরও বেশি মানসিক ধৈর্য ও প্রশান্তির সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারেন। বার্ধক্য হল জীবনচক্রের স্বাভাবিক পর্ব এই বিষয়টার সঙ্গে তাঁরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবেন। জীবনে যে-লক্ষ্য এখনও তাঁরা অর্জন করতে পারেননি, বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছেও সেই অর্জনের সময় যে এখনও ফুরিয়ে যায়নি, এটাও তাঁরা উপলব্ধি করতে পারবেন।
কাউন্সেলিং-এর দরুণ বৃদ্ধদের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শের বিষয়টা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।
ধীরে ধীরে কিন্তু নির্দিষ্ট গতিতে লোকেরা ক্রমশ এটা উপলব্ধি করতে পারছেন যে, জীবনের চূড়ান্ত পর্বটা এমনই একটা পর্ব যখন আশা ও সুখের অনুভূতিকে সঙ্গী করে একটা পূর্ণ ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা যায়।
কাউন্সেলিং এবং সাইকোথেরাপি নিতে পারেন যে কোনো বয়সে ও বিভিন্ন সমস্যায়। যোগাযোগ করুন এসো নিজে করি তে। জীবন উপভোগ করুন এবং সুখী ও সুস্থ থাকুন।